ইনসাইড পলিটিক্স

কেন পিছু হটলেন শামীম ওসমান?


প্রকাশ: 10/01/2022


Thumbnail

শামীম ওসমান নিজেই আজ স্বীকার করেছেন, আজকের সংবাদ সম্মেলন তার জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সংবাদ সম্মেলন এবং তিনি যা অনেকটা ইচ্ছের বিরুদ্ধেই এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন এটি প্রকাশ করতে কিন্তু তিনি কোনো রাখঢাক রাখেননি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আজ গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শামীম ওসমান আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকা সমর্থিত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সমর্থন জানালেন। অবশ্য তিনি বলেছেন যে, প্রার্থী কোন ব্যক্তি হলো সেটি তার কাছে মুখ্য বিষয় নয়, নৌকাই হলো তার কাছে মুখ্য বিষয়। কিন্তু শামীম ওসমানের মত একজন লড়াকু যিনি তার অবস্থান থেকে কখনো সরেন না, যাকে আনকম্প্রোমাইজড লিডার বলা হয়, তিনি কীভাবে পিছু হটলেন -এটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় গুঞ্জন। পিছু হটার পিছনে রয়েছে পাঁচটি কারণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

১. শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান: শামীম ওসমানের রাজনৈতিক উত্থান হলো শেখ হাসিনার অপত্য স্নেহ এবং ভালবাসায়। শুধু শামীম ওসমান নয়, ওসমান পরিবারের প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির আলাদা একটা স্নেহ রয়েছে। বিশেষ করে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এই পরিবারের ভূমিকা, ত্যাগের কারণে শেখ হাসিনা সবসময় তাদের প্রতি আলাদা পক্ষপাত করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সবার ঊর্ধ্বে যে দলকে স্থান দেন সেটি সকলে জানে। এবার তিনি এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন এবং শামীম ওসমান এটি বুঝতে পেরেছিলেন যে শেখ হাসিনা তাকে যতই স্নেহ করেন না কেন, দলের প্রশ্নে, নৌকা প্রতীকের প্রশ্নে তিনি কোনো ছাড় দিবেন না। ফলে শামীম ওসমানের আর কোন উপায় ছিল না আইভীকে সমর্থন করা ছাড়া।

২. জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ পাঁচ নেতার ভূমিকা: শামীম ওসমানের পিছু হটার পিছনে জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ পাঁচ নেতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এদের কারণে শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান পিছু হটেছেন বলে অনেকে মনে করেন। কারণ এই পাঁচ নেতাই আওয়ামী লীগ সভাপতির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং তারা নির্বাচনের মাঠে থেকে দেখেছেন যে, শামীম ওসমানই গায়ে পড়ে আইভীর বিরুদ্ধে ঝগড়া করছে এবং বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলছে। পাঁচ নেতা এই বিষয়টি যে শেখ হাসিনাকে জানাবে এবং তার ফলে শামীম ওসমানের পরিণতি যে ভয়াবহ হতে পারে এটি শামীম ওসমান ভালোমতো বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণেই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের আগেই সংবাদ সম্মেলন করে তিনি গা বাঁচালেন।

৩. জনসমর্থন: শামীম ওসমান এবার বুঝতে পেরেছিলেন যে, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে এবার যাই হোক না কেন, আইভী বিজয়ী হবে। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত আইভীর বিরোধিতা করে থাকেন তাহলে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তার শেষ আবেদনটুকুও নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। কারণ নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ রয়ছে। কিন্তু আইভীর সমর্থন রয়েছে ব্যাপক। সাধারণ জনগণের মধ্যে আইভীর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। আর এ কারণেই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শামীম ওসমানকে আইভীর পক্ষ অবলম্বন করতে হয়েছে।

৪. শামীম ওসমানের ইমেজ সংকট: গত কিছুদিন ধরেই ইমেজ সঙ্কটে ভুগছেন শামীম ওসমান এবং ওসমান পরিবার। এর ফলে একসময়ে যেমন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ মানেই শামীম ওসমান ছিল, সেই অবস্থা পাল্টে গেছে। বরং এখন তরুণ প্রজন্মের আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ শামীম ওসমানকে আর পছন্দ করেন না। বরং তারা আওয়ামী লীগকে একটি শুদ্ধ রাজনীতির মধ্যে দেখতে চান, সেটির প্রতীক হলেন আইভী। এমনিতেই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় থাকা শামীম ওসমান এই নির্বাচনে যদি সরাসরি আইভীর বিরোধিতা করতেন তাহলে হয়তো আওয়ামী লীগের মধ্যে তার শেষ সমর্থনটুকু নষ্ট হয়ে যেতো। কাজেই তিনি বুদ্ধিমানের মতো মৌখিকভাবে হলেও আইভীকে সমর্থন দিয়েছেন।

৫. বিএনপি-জামায়াত ফ্যাক্টর: শামীম ওসমান যাই করেন না কেন তিনি তাঁর রাজনীতিতে কখনো বিএনপি-জামায়াতের সাথে আপোষ করেননি। কিন্তু এবার যদি তিনি আইভীর বিরোধিতা করতেন তাহলে তা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে যেতো। এরকম পরিস্থিতি শামীম ওসমানের জন্য অপমানজনক হতো এবং সারা জীবনের যে রাজনৈতিক অর্জন সে অর্জনটি প্রশ্নবিদ্ধ হতো। আর এ কারণেই এরকম একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাননি শামীম ওসমান।

এই পাঁচ কারণে তিনি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আইভীর পক্ষে আসলেন এবং পিছু হটলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭