ইনসাইড পলিটিক্স

টানেলে থাকা বিএনপি কি আলোর দেখা পাবে?


প্রকাশ: 11/01/2022


Thumbnail

টানেলের অভ্যন্তরে থাকা বিএনপি এখন আলোর সন্ধান করছে। একদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে নাকি আন্দোলনে যাবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না দলটির হাইকমান্ড। অন্যদিকে জনগণ কর্তৃক ধিকৃত জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে হরিহর আত্মার সখ্যতা বজায় রাখবে নাকি জোট ভেঙ্গে দেবে, এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয় এখনো স্পষ্ট নয় বিএনপির রাজনৈতিক নীতি-কৌশলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটিতে দিশাহীন অবস্থা বিরাজ করছে এবং দলটি বর্তমানে আলোর সন্ধানে ব্যতিব্যাস্ত। তবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত আলোর দেখা পাবে কিনা, এ নিয়ে দলটির অনেক নেতাই দ্বিধান্বিত। বিশেষ করে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আদালত কর্তৃক দণ্ডিত পলাতক তারেক রহমানের নেতৃত্বে এ দল আলোর দেখা পাবে কিনা, তা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সহ রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেরই সন্দেহ আছে।

সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন যে, বিএনপির আন্দোলন এখন টানেলের শেষ পর্যায়ে, ভেতর থেকে তারা আলো দেখতে পাচ্ছেন। তার এ মন্তব্য থেকে এতটুকু স্পষ্ট যে, বিএনপির সিনিয়র নেতারাও মনে করে দলটি টানেলে আটকে আছে এবং আলোতে ফিরতে প্রাণপন চেষ্টা, প্রয়াস চালাচ্ছে। মানুষ সাধারণত কোথাও হারিয়ে গেলে অথবা দিক খুঁজে না পেলে আলো দেখার চেষ্টা করে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আজ অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের নানা হিসাব-নিকাশে বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন নেতা-কর্মীদের অনেকে। 

বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, রাজনীতিতে এখন বিশেষ ভূমিকায় নেই বিএনপি। বিশেষ করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের দিকটি এখনো স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা তো কাটেইনি, বরং বেড়েছে। গত কয়েক মাসের মধ্যেই জনপ্রিয় চার নেতাকে বহি:ষ্কার করেছে দলটি। লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার নির্দেশেই দলের জনপ্রিয় নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তারেকের স্বৈরচারী মনোভাব দলকে দিনে দিনে জনবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি কতটা প্রস্তুত, সে প্রশ্ন উঠেছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে নাকি বর্জন করে আন্দোলনের ছক কষবে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কাছেও এর জবাব নেই। তবে বর্তমানে মাঠপর্যায়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর যে কমিটি দেওয়া হচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে হচ্ছে যে এসব কমিটির লক্ষ্য নির্বাচন, আন্দোলন নয়। তবে দলটি কখন কি করবে, দলটির কে কি বলবে, বর্তমানে তা বোঝা অত্যন্ত মুশকিল। তাদের এই আচরণে দেশবাসী তো বটেই, দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও হতাশ। বিরোধী দলের ওপর জনগণের ভরসা রাখার কথা থাকলেও বাস্তবতা হলো মানুষ বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির প্রতি আস্থা হারিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, জাতীয় সংসদে আসনসংখ্যা যত কমই হোক না কেন, এখনও বিএনপিই দেশের প্রধান বিরোধী দল। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের প্রতিদিনকার বক্তৃতা-বিবৃতির লক্ষ্যবস্তুও বিএনপি। জাতীয় পার্টিকে মনে করা হয় সরকারের ‘ঘরের লোক’ বা ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল। বুদ্ধিদীপ্ত, গঠনমূলক রাজনীতি থেকে বিএনপির অবস্থান যোজন যোজন দূরে থাকায়  ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতা-অক্ষমতার ফসল যে বিএনপি ঘরে তুলে নেবে, তার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপির রাজনীতি ও সংকট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, বিএনপির রাজনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হল নেতৃত্বের সংকট। তাদের সমর্থক আছে, কিন্তু তাদের নেতৃত্ব নেই। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে তারা যে আন্দোলনের কথা বলছে ও করছে, আমি মনে করি না এটি রাজপথের আন্দোলনের বিষয়। এটি হলো মানবতার বিষয়, সহনশীলতার বিষয় এবং একই সঙ্গে সহমর্মিতার বিষয়। রাজপথে কোনো কিছু সমাধান হয় না। রাজপথের সমাধান সাময়িক সমাধান। এটা ভবিষ্যতে আরো প্রকট আকার ধারণ করে। রাজনীতি হল আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো, ছাড় দেওয়া। এটাকে বলে রাজনীতি। রাজনীতি হচ্ছে সমাধানের প্রক্রিয়া, সমস্যা সৃষ্টি করার নয় বলেও মনে করেন তিনি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭