ইনসাইড পলিটিক্স

ওয়ান-ইলেভেনের মাস্টারমাইন্ড কারা ছিলো?


প্রকাশ: 11/01/2022


Thumbnail

আজ ওয়ান-ইলেভেন। ২০০৭ সালের এই দিনে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুখে সেনাসমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। মূলত নির্বাচন নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল সেই অচলাবস্থা নিরসনে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করে, দেড় কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করে, নির্বাচন কমিশনে কিছু জোকার বসিয়ে এটিকে একটি প্রহসনে পরিণত করে। আর অন্যদিকে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ স্বঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়ে রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেন। তিনি বিএনপির নির্দেশিত পথেই একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের পথে বদ্ধপরিকর ছিলেন। এই অবস্থায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে, আওয়ামী লীগ লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও এবং এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যেই সেনাবাহিনীর সমর্থনে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনটি ছিল একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। শুধুমাত্র নির্বাচনের উদ্দেশ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়নি বরং এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পেছনে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি ছিল। দীর্ঘদিন ধরে অনির্বাচিত সরকার গঠন এবং প্রধান দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়ে বিরাজনীতিকরণের একটি পটভূমি তৈরি করাই ছিল এই ওয়ান ইলেভেনের মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগানো হয়। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং বিরাজনীতিকরণের একটি পরিকল্পনা থেকে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল। ওয়ান ইলেভেনের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের মধ্যে রয়েছেন:

১. ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ওয়ান ইলেভেনের মূল মাস্টারমাইন্ড মনে করা হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরই তিনি একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এই রাজনৈতিক জোট গঠন করার পর রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন কিন্তু তার রাজনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ করতে হবে এবং বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে হবে। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটি বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল শুধু সহিংসতা করে, ভাঙচুর করে এবং এরা উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক। এটি বোঝানোর মত মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ইউরোপকে ড. ইউনূস একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন বলে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেখানে থেকেই ওয়ান-ইলেভেনের বাস্তবায়ন। তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মনে করা হয় ওয়ান-ইলেভেনের প্রধান মাস্টারমাইন্ড।

২. ড. কামাল হোসেন: ড. কামাল হোসেন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ওয়ান-ইলেভেন আনার ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন। বিশেষ করে ড. ইউনূসের সঙ্গে তার সখ্যতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতার ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকে দিয়ে জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। এই বাস্তবতায় তারা যেন একটি অনির্বাচিত সরকারকে সমর্থন দেয়, সেনাবাহিনী পিছনে থেকে সেই অনির্বাচিত সরকার পরিচালনা করবে। এরকম একটি ফর্মুলা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৩. ড. বদিউল আলম মজুমদার: ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশে একজন মার্কিনপন্থী উন্নয়ন কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিক এর মাধ্যমে আসলে বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করেন। তিনিও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে প্রধান দুটি দলের বাইরে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং সে নিয়ে তিনি বিভিন্ন মহলে মেরুকরণের চেষ্টা করেছিলেন।

৪. মতিউর রহমান: ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব মনে করা হয় মতিউর রহমানকে এবং বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য যে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার প্রয়োজন এবং দীর্ঘদিন ধরে অনির্বাচিত শাসন রেখে একটি তৃতীয় শক্তিকে বিকশিত করা দরকার এই ফর্মুলা মতিউর রহমানের।

৫. মাহফুজ আনাম: ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামও ছিলেন ওয়ান-ইলেভেনের একজন অন্যতম কুশীলব। তিনি চেয়েছিলেন ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে যেখানে রাজনৈতিক শক্তিগুলো থাকবে না বরং সুশীল সমাজের একটি কর্তৃত্ব রাজনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই পাঁচজনই মূলত ওয়ান-ইলেভেনের মাস্টারমাইন্ড। তবে ওয়ান-ইলেভেন আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাস, ভারতীয় দূতাবাস যুক্তরাজ্য দূতাবাস,  জাপান দূতাবাস ও প্রভাবশালী দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭