ইনসাইড পলিটিক্স

আশার প্রদীপ নিভে গেল বিএনপির


প্রকাশ: 11/01/2022


Thumbnail

বিএনপি আশা করেছিল বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন তীব্র হবে। এই আন্দোলনের উপর সওয়ার করে বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে কিন্তু সেই আশা গুড়ে বালি। বেগম খালেদা জিয়া সিসিইউ থেকে কেবিনে যাওয়ার পর বিএনপির নেতারা আশাহত হয়েছিলেন। সেই আশাহতের ধকল সামলাতে না সামলাতেই দ্বিতীয় আঘাত আসলো বিএনপির জন্য। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে বিএনপি যে ‘তীব্র গণআন্দোলন’ এর মুখে সরকারকে হটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল সেই পরিকল্পনা এখন ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গত কিছুদিন ধরেই বিশেষ করে নভেম্বর মাস থেকে বিএনপি নেতাদেরকে অনেক উচ্ছ্বাসিত দেখা গিয়েছিল। বিএনপির অনেক নেতারাই বলছিল যে, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। বিএনপি দেখাদেখি আরো কিছু রাজনৈতিক দল যারা বিএনপির দিকে তাকিয়ে থাকে তারাও আশাবাদী হয়ে উঠেছিল এবং তারা মনে করেছিল যে, এটাই সুযোগ সরকার পতনের আন্দোলনের। এর মধ্যে নানারকম ঘটনাপ্রবাহ বিএনপির জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই রাজনৈতিক দলটি একটি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। বিশেষ করে নভেম্বর মাস থেকে টানা কর্মসূচির মধ্যে থাকায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এক ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এরপর বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ শুরু করে এবং এটিও বিএনপিকে অনেকখানি আশান্বিত করে। বিএনপি নেতারা হিসেব করেছিল সামনের দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশন গঠন সহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে আন্দোলন শুরু হবে সেই আন্দোলনে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন হবে। কিন্তু বিএনপি যে শুধুমাত্র অসত্য এবং ভিত্তিহীন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আন্দোলন করছে এটি নয়। বরং বিএনপি জনগণের সাথে এক ধরনের দৃশ্যত প্রতারণা করছে বলেও এখন প্রমাণিত হয়েছে।

বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সম্পর্কে যে প্রতিবেদনগুলো পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস সত্যি। তবে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নন। তাকে খুব শীঘ্রই বাড়িতে পাঠানো হবে বলেও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। একটি সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়া এখনই বাড়িতে যাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থায় আছেন। কিন্তু বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের অনুরোধে তাকে এখনো হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। কিন্তু বেশিদিন যে বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে থাকতে পারবেন না এটি মোটামুটি নিশ্চিত। আর এর ফলে বেগম খালেদা জিয়া যখন বাড়িতে যাবেন তখন বিএনপি কি নিয়ে আন্দোলন করবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলকে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয় জনগণের ইস্যু নিয়ে। কিন্তু বিএনপি জনগণের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন না করে ব্যক্তি ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের দিকে মনোযোগী ছিলো। ফলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো যে বিএনপি মানুষকে একটা ধারণা দিচ্ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়ার যেকোনো অবস্থায় মারা যাবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের আবেগকে বিএনপি কাজে লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু এই ধরনের আবেগ সৃষ্টির যে উৎস সেটি যদি প্রতারণা হয় তাহলে তা বেশিদিন ঠিকে না, বিএনপির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর বিএনপির প্রধান নেতা বেগম খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তিনি অসুস্থ হবার আগেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। আবার বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা লন্ডনে পলাতক। তিনি অনলাইনে দল পরিচালনা করেন, যেটা বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের জন্য অবাস্তব। এখন বিএনপির তৃতীয় নেতা অসুস্থ হলেন। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে বিএনপি যে বড় ধরনের আন্দোলন করতে পারবে না সেটি সুস্পষ্ট। এর ফলে আরেকদফা বিএনপির আন্দোলনের উদ্যোগ ভেস্তে গেলো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭