ইনসাইড পলিটিক্স

সেই পুরনো পথেই তৈমুর


প্রকাশ: 11/01/2022


Thumbnail

গত ১৫ বছর বিএনপির রাজনীতির অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে বিএনপি একটি সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা অনুসরণ করছে। সেই ফর্মুলাটা হলো প্রথমে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দাঁড়ানো এবং ঘোষণা করা যে, তাদের পক্ষে গনজোয়ার নেমেছে, জনগণ রায় দিতে প্রস্তুত, নির্বাচনের ভোটে তারা বিপ্লব করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। দ্বিতীয় দফায় তারা বলবে যে, তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে, তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে ইত্যাদি শিশুতোষ অভিযোগগুলো করে তারা নির্বাচনে কারচুপি, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে। তৃতীয় দফায় তারা ভোটের আগে বলবে যে, তাদের এজেন্ট এবং নির্বাচনের লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। চতুর্থ দফায় তারা বলবে যে, ভোট কারচুপি হয়েছে এবং শেষ দফায় বলবে যে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতি করা হয়েছে। যে কয়টি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে তার প্রতিটি নির্বাচনে এই ফর্মুলাই অনুসরণ করেছে। কোথাও কোথাও চতুর্থ ধাপেই অর্থাৎ ভোটের দিন গিয়ে তারা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে গেছে। আবার কোথাও কোথাও তারা নির্বাচনে থেকেছে কিন্তু ভোটের ফলাফলে জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেই একই পথে হাঁটছেন বিএনপি নেতা, স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিদ্বন্ধিতার ঘোষণা দিয়েই তিনি মাঠে নেমেছিলেন এবং সেই সময় তিনি বলেছিলেন তার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা গেলো গণজোয়ার নয়, আসলে আওয়ামী লীগের একটি অংশই তাকে ভোটে নামানোর ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং তাদের সমর্থন নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। এরপর যখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলো এবং শামীম ওসমান আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দিলেন যে, তিনি নৌকার বিরুদ্ধে যাবেন না, নৌকার পক্ষে প্রচারণা করবেন, তখন তৈমুর আলম খন্দকারের সুর পাল্টে গেলো। গতকাল থেকে তৈমুর আলম খন্দকার বলা শুরু করছেন যে, তার নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে, যারা তার নির্বাচনী প্রচারণা করছেন তাদের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যদিও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে এ ধরনের বাস্তবতা দেখা যায়নি। বরং তৈমুর আলম খন্দকারের নেতাকর্মীরা বহাল তবিয়তে নির্বাচনী প্রচারণা করছে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

তৈমুর আলম খন্দকার অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগের নেতারা ঘুঘুর ফাঁদ দেখানোর কথা বলার পরপরই এখন তিনি ঘুঘুর ফাঁদ দেখতে শুরু করেছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে প্রচারণা করতে বাধা দিচ্ছে। অর্থাৎ সেই পুরনো পথেই হাঁটলেন। এখন হয়তো নির্বাচনের দিন তিনি বলবেন, তার এজেন্টদেরকে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে বা তার এজেন্টদেরকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর তিনি বলেন নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে অথবা তিনি ভোটের দিন হয়তো নির্বাচন থেকে সরে যাবেন। অর্থাৎ বিএনপি যখন নির্বাচনে পারে না তখন একটি ফর্মুলায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় এবং সেই পথেই এখন হাঁটছেন তৈমুর আলম খন্দকার।

কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, যদি তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয় তাহলে কেন তাঁর এজেন্টদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে? তাঁর এজেন্টদেরকে যখন হবে তখন সাধারণ ভোটার, জনগণ কি করলো? তারা কেন বাধা দিল না? আর জনগণ যদি ভোট বিপ্লব করতে চায় তাহলে এজেন্টদের সরিয়ে নিলেও তৈমুর আলম খন্দকারের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারার কথা না। কারণ জনগণই হলো আসল শক্তি এবং জনগণের শক্তি কোনো শক্তির কাছেই মাথা নোয়াতে পারে না। তাই বিএনপি যদি সত্যি সত্যিই জনগণের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে নির্বাচন করতো তাহলে এই নির্বাচনে তাদের এ ধরনের আচরণ করার কোনো কথা না। তৈমুর আলম খন্দকার আসলে অন্যের ওপর ভর করেই নির্বাচন করেছিলেন। তিনি হয়তো আশা করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার সাথে কাজ করবে এবং তাকে জিতিয়ে দেবে। অন্যের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার এ ধরনের প্রত্যাশা বিএনপি বিভিন্ন সময়ে করেছে এবং এবারও করলো। সেই পুরনো খেলাই খেলছেন বিএনপির নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭