নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন জমে উঠেছে। নির্বাচন নারায়ণগঞ্জে হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে গোটা দেশবাসীর নজর আটকে আছে হাইভোল্টেজ এ নির্বাচনের দিকে। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন দেখে দেখে যেখানে মানুষের ভোট দেয়ার ইচ্ছাটাই মরণাপন্ন অবস্থায় চলে গেছে, সেখানে এ ধরণের জমজমাট নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব মহল। বিশেষ করে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোড়কে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এসব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছিল আইভী-শামীম বিরোধ। এই বিষয়ে শামীম ওসমান এতদিন চুপ থাকলেও গত ১০ জানুয়ারি (সোমবার) সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, নৌকার পক্ষেই তিনি আছেন, প্রার্থী যেই হোক না কেন। এমতাবস্থায় নির্বাচনে শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে কাজ করবেন নাকি করবেন না, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ দেশব্যাপী আলাপ-আলোচনা চলছে।
গত সোমবার পুরনো সব মনোমালিন্য দূরে রেখে নৌকার পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিতে সংবাদ সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সংবাদ সম্মেলনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদেরকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি। তবে সিটি নির্বাচনে তার এ পক্ষে থাকাকে কৌশল হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে কেন্দ্রের চাপেই জনসম্মুখে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি আইভীকে সমর্থনের কথা বলেছেন বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। নির্বাচনে শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে কাজ করতে তার নেতা কর্মীদের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত তার অনুসারী অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের একটি অংশকে নৌকার প্রচারণায় তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে প্রচারণায় তাদের হয়তো পাওয়া যেতে পারে, আবার নাও যেতে পারে। বরাবরের মতো এবারও এ প্রশ্নটি নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনকি সেলিনা হায়াৎ আইভী তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছেন যে, শামীম ওসমানের ওপর তার আস্থা নেই। বরং তার আস্থা জনগণ, প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ এবং নৌকার ওপর। একই সাথে তিনি মনে করেন যে, তিনি এখন আরও সুসংগঠিত এবং সঙ্গবদ্ধভাবে তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী। কারণ সাধারণ মানুষ তাকে আবারও জয়যুক্ত করবে এবং নারায়ণগঞ্জবাসীকে সেবার সুযোগ করে দেবে।
আইভীর কি শামীম ওসমানের সমর্থন জরুরি?
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পরিবারের সাথে দীর্ঘদিনের বিরোধ ওসমান পরিবারের। এ বিরোধ জারি রেখেই মেয়র পদে টানা বিজয়ী হয়েছেন আইভী। বিশেষ করে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিক নির্বাচনে সেসময়কার নৌকা প্রতীকপ্রাপ্ত প্রার্থী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন চুনকা কন্যা সেলিনা হায়াৎ আইভী। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আইভী নারায়ণগঞ্জকে যেভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন, তাতে তার বিজয় সুনিশ্চিত বলেই নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইভী এক প্রকারের যুদ্ধ করেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে টিকে আছেন এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার এই বিদ্রোহী মনোভাবই তাকে নারায়ণগঞ্জের একজন অপরিহার্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি শামীম ওসমানকে মোকাবেলা করে জিতেছেন। ফলে এবারের নির্বাচনেও তিনি শামীম ওসমানের মুখাপেক্ষী থাকবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত নির্বাচনী টিমের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, আমি মনে করি শামীম ওসমান আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, মনোমালিন্য থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রতীক এখানে নৌকা। শামীম ওসমান শেখ হাসিনার কর্মী। জননেত্রী শেখ হাসিনা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। সেইক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যক্তিগত মনোমালিন্য, মান-অভিমান হয়তো বা আছে। কিন্তু নৌকার প্রতি তাদের মান-অভিমান নেই। নৌকা যারা করে, সবাই ঐক্যবদ্ধ।