নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 04/12/2017
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছেন বেগম জিয়া। আদালতে তিনি জামিন পাবেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। বিএনপির একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেছেন, ‘নাটকীয় কিছু না হলে, মঙ্গলবার বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’ বিএনপির চিন্তা এই জামিন নিয়ে নয়, বরং দ্রুত দুর্নীতির মামলা দুটি যেভাবে সমাপ্তির দিকে এগুচ্ছে তাতেই উদ্বিগ্ন বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, বেগম জিয়াকে দণ্ডিত করাই এই মামলা দুটির প্রধান লক্ষ্য। বেগম জিয়া জেলে গেলে কী হবে? এই ভাবনা ও কর্মপন্থা নির্ধারনেই ব্যস্ত বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকারের আচরণে স্পষ্ট প্রমাণিত তারা বেগম জিয়াকে জেলে নিতে চাইছে। তাঁকে নির্বাচনের অযোগ্য করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে বেগম জিয়াকে অল্প সময়ের জন্য হলেও জেলে যেতে হবে। বিএনপি নেতা এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুব উদ্দিন খোকন অবশ্য মনে করেন, ‘নিম্ন আদালত তাঁকে দণ্ডিত করলেও তিনি জেল এড়াতে পারবেন।’ আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালতেই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। এই যুক্তিতে আপিল পর্যন্ত সময়ে চাইলে নিম্ন আদালতেই বেগম জিয়াকে জামিন দিতে পারেন। কারণ তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সম্মানিত ব্যক্তি, প্রবীণ ও নারী।’ খোকন মনে করেন, ‘হাইকোর্ট থেকেও আমরা আগাম জামিন নিতে পারি। সবকিছুই নির্ভর করছে মামলার গতি প্রকৃতির ওপর।’ তবে, বিভিন্ন মামলার উদাহরণ দিয়ে সরকার পক্ষের কৌসুলী অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল বলেছেন, ‘নিম্ন আদালত যদি তাঁকে দণ্ড দেয় তাহলে জেলে যেতেই হবে। দণ্ডিত ব্যাক্তিকে জামিন দেওয়ার এখতিয়ার ওই আদালতেই নেই।’ কাজল মনে করেন, হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেই তাঁকে জামিন প্রার্থনা করতে হবে।’
বেগম জিয়াকে যদি শেষ পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য হলেও জেলে যেতে হয় তখন বিএনপির আইনজীবীরা তাঁকে কারাগারের বদলে হাসপাতালে নেবেন। এর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। ইউনাইটেড হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক ইতিমধ্যেই তাঁকে দেখেছেন। এদের মেডিকেল সার্টিফিকেট বেগম জিয়ার জেল এড়াতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালনে করবে বলে আশা করছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
বেগম জিয়া দণ্ডিত হলেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ৭২ এর ১২ (ঘ) অনুযায়ী তিনি নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হবেন। এটাই বিএনপির উদ্বেগের প্রধান কারণ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়াকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীল নকশা নিয়ে এগুচ্ছে।’ স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ’সরকারের এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আমরা আইনগত এবং আন্দোলন-দুই পথই খোলা রাখছি’। বিএনপি নেতা এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেছেন, ’আরপিওর ওই ধারাটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ নিম্ন আদালত নয় বরং আপিল বিভাগে চূড়ান্ত ভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দণ্ডিত বলা যাবে না।’ তিনি বলেন,’বহু মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ডিত ব্যাক্তি হাইকোর্টে বা আপিল বিভাগে খালাস পেয়েছেন।তাই নিম্ন আদালতের রায়ের ভিত্তিতে কারো সাংবিধানিক অধকার খর্ব অসাংবিধানিক।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মনে করেন, শুধু নিম্ন আদালতের রায় নয়, বেগম জিয়াকে নির্বাচনে অযোগ্য করার বিরুদ্ধেও উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে। এক্ষেত্রে ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবং দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া’র মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ নিম্ন আদালতের রায় বেগম জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা হবে না।’
আইনগত প্রতিকার গ্রহনের পাশাপাশি রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমেও বিএনপি এই রায় মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, এই মামলায় দণ্ডিত হলে ক্ষতির চেয়ে বিএনপির লাভই হবে বেশি। এতে দল সংগঠিত হবে, কর্মীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে আর সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আসবে বিএনপির পক্ষে। বিএনপির একজন নেতা মনে করেন, ৯০ এ এরশাদকে গ্রেপ্তার করেই তাঁকে জনপ্রিয় করা হয়। বেগম জিয়া দণ্ডিত হলে, ‘বিএনপির ক্ষতির চেয়ে লাভই হবে।’
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭