ইনসাইড থট

করোনা নিয়ে করো না রাজনীতি


প্রকাশ: 12/01/2022


Thumbnail

বিশ্বব্যাপী ওমিক্রনের তাণ্ডবের মধ্যে ওমিক্রন নিয়ে দেশে চলছে রাজনীতি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, "শুধুমাত্র বিএনপির সভা-সমাবেশ ঠেকাতেই সরকার সারাদেশে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কি না, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন এবং সংশয় রয়েছে।" অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, "সরকার জনস্বার্থে বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বিএনপি না মেনে তাদের কর্মসূচি চালালে করোনা সংক্রমণের দায় তাদেরকে নিতে হবে।" কোভিড প্রতিরোধে সাম্প্রতিক এগারো দফা বিধি নিষেধকে তথ্যমন্ত্রী বলছেন জনস্বার্থ, রিজভী আহমেদ বলছেন বিরোধী আন্দোলন দমন কৌশল। কে ঠিক? তথ্যমন্ত্রী নাকি রিজভী আহমেদ?  

প্রথমেই দৃষ্টি দেয়া যাক ওমিক্রন সংক্রমণকালে বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতির দিকে। ওমিক্রন আক্রান্ত দেশগুলোতে কোভিড সংক্রমণের হার পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি।  জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, ওমিক্রনের ধাক্কায় গেলো সপ্তাহের চেয়ে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ বেড়েছে ৭১ শতাংশ। শুধু আমেরিকাতেই সপ্তাহের ব্যবধানে শতভাগ রোগী বেড়েছে। দক্ষিণ পূর্ব  এশিয়ায় এ সংখ্যা শতকরা ৭৮, ইউরোপে শতকরা  ৬৫। ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে তিনগুণ বেশি সংক্রামক। তবে হাসপাতালে ভর্তি হবার প্রয়োজনীয়তা ৭০ ভাগ কম, মৃত্যুও কম। তবে যারা পূর্ণ ডোজ টিকা নেয়নি বা বুস্টার ডোজ দেয়নি তাদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি আর মৃত্যুর হারও বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাবধান করে বলেছে ওমিক্রনের রোগীতে হাসপাতাল সয়লাব হচ্ছে এবং মরছে।  তাই এটিকে 'মৃদু' বলা ভুল হবে। যেহেতু তিনগুণ সংক্রামক, তাই আক্রান্তের ৩০ ভাগ রোগি ভর্তি হলেও হাসপাতালগুলোতে বিগত কোভিড ঢেউয়ের মতোই শয্যা সংখ্যার প্রয়োজন হবে। তাতে আক্রান্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

ওমিক্রন মোকাবিলায় আক্রান্ত দেশগুলো কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করছে, লক ডাউন দিচ্ছে। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন চলছে, চলছে কার্ফু। ভারতের সাথে অনেক দেশের ফ্লাইট চলাচল অনেক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে ফ্লাইট নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। গতকাল সারা বিশ্বে সাড়ে তিন হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল তিনটে পর্যন্ত বাতিল হয়েছে তেইশশ' ফ্লাইট। আগামীকালের হাজারখানেক ফ্লাইট ইতিমধ্যেই বাতিল। যুক্তরাজ্য আরোপ করা বিধিনিষেধ জোরালো করেছে, জনসমাগম সীমিত করেছে।  জার্মানিতে নাইট ক্লাব বন্ধ, প্রাইভেট পার্টিতে দশ জনের সীমা বেঁধে দিয়েছে। ইতালি আউটডোর এ নতুন বছর উদযাপন করতে দেয়নি, নাইট ক্লাব বন্ধ করেছে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। চেক রিপাবলিক একশ জনের বেশি জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। নরওয়েতে দশ জনের বেশি কোন প্রাইভেট পার্টিতে নয়, ৫০ জনের বেশি নয় কোন জনসমাবেশে। আয়ারল্যান্ড ইনডোর ও খেলাধুলা কেন্দ্রে ৫০ জনের বেশি প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ডেনমার্কেও ৫০ জনের বেশি নয় কোন সমাবেশে। জনসমাগম সীমিতকরণ অনেক দেশে সুফল মিলেছে।

এসব দেশে কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক টিকার দুডোজ নেয়ার হার ৭০ শতাংশের বেশি। জনবহুল বাংলাদেশে টিকার হার তুলনামূলকভাবে কম। এ যাবৎ দু'ডোজ নিয়েছে ৩৩ শতাংশ, এক ডোজ নিয়েছে ৪৭ শতাংশ। বুস্টার ডোজ তো মাত্রই শুরু হলো। তাই বাংলাদেশে  ওমিক্রনের ঝুঁকি ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের অনেকেই দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষ, দিন আনে দিন খায়। পুরোপুরি লক ডাউন কখনোই কাম্য নয়। কোভিডের শুরু থেকে তাই জীবন জীবিকার সাথে সমন্বয় করে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। কোভিড নিয়ন্ত্রণে এ সমন্বয় দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে এগারো দফা বিধি নিষেধ সরকার আরোপ করেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলা যায়। অর্থনীতির স্বার্থে সব কিছু বন্ধ রাখা যায় না।  যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্য মেলা চালাতে হচ্ছে, একইভাবে বইমেলার কথা ভাবা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপে যাঁদের মধ্যে প্রশ্ন ও সংশয় জাগছে তাঁদের রাজনীতির উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিতেই পারে। জনমনে প্রশ্ন বা সংশয় যাই থাকুক জাতীয় নেতাদের মুখে এ ধরণের কথা শোভা পায় না, হাস্যকরও বটে। জনমনে তখন প্রশ্ন জাগে, এদের রাজনীতি তবে কাদের স্বার্থে? তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের যুগে এখন মানুষকে ছেলে ভুলানো কথায় ভুলানো যায় না। কথায় কথায় মানুষ এখন ইন্টারনেটে তথ্য যাচাই করে। তরুণদের মধ্যে এ প্রবণতা আরো বেশি। তাই রাজনীতি জনকল্যাণমুখী না হলে সবার জন্যই বিপত্তি । বিধিনিষেধ আরোপের মধ্যে রাজনীতি না খুঁজে টিকা দেয়ার হার কেন কম, কিভাবে বাড়ানো যায়- এসব নিয়ে সরকারকে সমালোচনা করলে, গঠনমূলক সমাধান দিলে তাঁদের রাজনীতির উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে আর কোন প্রশ্ন ও সংশয় থাকে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭