ইনসাইড গ্রাউন্ড

যুব দলে অভিজ্ঞতা নয়, প্রাধান্য দেয়া হউক তরুণ ক্রিকেটারদের


প্রকাশ: 13/01/2022


Thumbnail

আগামীকাল (১৪ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে যুব বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবস্থান করছে যুব বিশ্বকাপ খেলতে। গতবার দক্ষিণ আফ্রিকায় যুব বিশ্বকাপে যে দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা, সেই স্কোয়াডের তিনজন এবং সেই পুলের চারজন আছেন এই দলেও।  গত বিশ্বকাপে খেলা রাকিবুল ও সাকিবের আরেকটি যুব বিশ্বকাপ খেলার কোন কথা ছিল না। কিন্তু গত অক্টোবরে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে যুব দলের চরম ব্যর্থতার জন্য সিনিয়র ক্রিকেটে নিয়মিত হয়ে পড়া রাকিবুল ও সাকিবকে ডেকে আনা হয় যুব দলে। শোনা যায়, আবারও যুব দলে ফেরার ইচ্ছাও খুব একটা ছিল না তাদের।

পুরনোদের ডেকে এনে আবার যুব স্কোয়াডে নেওয়ার কারন হিসেবে ম্যানেজার আবু এনাম মো. কাউসার অভিজ্ঞতার যুক্তি দেখিয়েছেন। কিন্তু যুব দল ব্যাপারটাই তো তরুণদের। এখানে অভিজ্ঞতার প্রাধান্য থাকার কথা না। সব দেশের যুব স্কোয়াডে তো আনকোরা ক্রিকেটাররাই সুযোগ পান। প্রথম বড় মঞ্চে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ থাকে তাদের। এতে করে বোঝা যায় একটা দেশের প্রতিভাবান ক্রিকেটারের উঠে আসার স্রোত আসলে কেমন।

বয়স অনুকূলে থাকলেও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে কেউ একবার থাকলেই আর তাকে পরে দলে রাখা যাবে না, রাহুল দ্রাবিড় এমনই কড়া নিয়ম করেছিলেন ভারতে। ভারতীয় দল সেটাই অনুসরণ করে আসছে। কারণ বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কাপ জেতার চেয়ে প্রক্রিয়া অনুসরণ করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

বাংলাদেশে এই ব্যাপারে দেখা যায় পরিকল্পিত উদাসীনতা। তিন-চার বছর বয়স কমিয়ে ক্রিকেটারদের যুব দলে খেলিয়ে দেওয়া হয়। তাই প্রক্রিয়া অনুসরণ থেকে যায় উপেক্ষিত। বর্তমান যুব দলের ক্রিকেটারদের খেলতে দিলেই একটি বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু তা না করে পুরনোদের ডেকে এনে খেলিয়ে যুবাদের সামর্থ্য আড়াল করলে সেই চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়।

ভারতের উদাহরণ লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সাফল্যের চেয়ে যুবাদের খেলিয়ে, নানা রকম পরীক্ষা-নীরিক্ষায় গিয়ে সঠিক সমন্বয় খোঁজাই তাদের উদ্দেশ্য। এতে তরুণদের সামর্থ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্বকাপে তারা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও সেখান থেকে দুই-চারজন ক্রিকেটার যেন মূল স্রোতে সর্বোচ্চ সামর্থ্য নিয়ে আসতে পারেন সেটাই থাকে মূল উদ্দেশ্য। গত যুব বিশ্বকাপ না জিতলেও যেমন রবি বিষ্ণুই, যশ্বসি জয়সাওয়ালরা আইপিএলে দেখিয়েছেন তারা কতোটা তৈরি।

এখানেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের ফাঁকিটা। বাংলাদেশের কর্তাব্যক্তিরা মূলত চায় আরও একটি সাফল্য, যেখানে আড়াল পড়বে বাস্তবতা। যুব বিশ্বকাপে গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এসেছে বড় সাফল্য। তার আগেও বড় বড় দলকে প্রায়ই হারানোর নজির আছে বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকাতেও বাংলাদেশের তরুণদের নাম এসেছে। কিন্তু সিনিয়র ক্রিকেটে এসে সেই ছাপ আর থাকেনি। ২০১২ সালে যুব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন এনামুল হক বিজয়। একই যুব বিশ্বকাপে পাকিস্তান স্কোয়াডে ছিলেন বাবর আজম। বাবর এখন বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। আর বিজয় বাংলাদেশ দলেরও আশেপাশে নেই।

যুব বিশ্বকাপে সাফল্য পাওয়া প্রধান বিষয় না। এখানে প্রধান বিষয় হচ্ছে প্রক্রিয়া অনুসরণ। যুব বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলেও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কেউ ঠিক পথে থাকলে সিনিয়র পর্যায়ে এসে হতে পারে বড় কিছু। যুব পর্যায়ে দারুণ করলেও পরে কেন বাংলাদেশের তরুণরা সেটা ধরে রাখতে পারেন না, এই কারণ তলিয়ে দেখলে প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার বিষয়টাই হয়তো উঠে আসবে বড় হয়ে।

বাংলাদেশে বোর্ডের পলিসি মেকাররা আসলে চায় চটকদার খবরে বড় ক্ষত আড়াল করে দিতে। সাময়িকভাবে সেটা বেশ কাজে দিলেও সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর সেই ক্ষতের ব্যথায় কাতর হয় পুরো কাঠামো। সেটার প্রভাব পড়ে সিনিয়র ক্রিকেটে। যুব পর্যায়ে দুর্বলতাগুলো নজরে না আসার কারনে সিনিয়র পর্যায়ে এসে ক্রিকেটারদের টেকনিকে খুঁত থেকে যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় সাফল্যের দিকে না তাকিয়ে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। মূলত যুব বিশ্বকাপের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ সিনিয়র পর্যায়ের জন্য যুবাদের প্রস্ততি পর্ব। বোর্ডের কর্তাদের এখন সেই শুভবুদ্ধির উদয় হলেই হয়!


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭