কালার ইনসাইড

‘দেশের মানুষদের মধ্যে যখন গোঁড়ামি দেখি, বুক ব্যথা করে’


প্রকাশ: 13/01/2022


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) চত্বরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকেতরঅনুষ্ঠিত ‘কাওয়ালি’ গানের আসরে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় অনুষ্ঠানের মঞ্চ, চেয়ার ও গানের বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই তাদের নিজেদের মতামত ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সেই কাতারে আছেন দর্শকপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ফেসবুকে লিখেন, একটা পোস্ট দেখলাম, যেখানে বলা হচ্ছে কাওয়ালি বঙ্গবন্ধুও শুনতেন। আরেকটাতে দেখলাম, কাওয়ালি ভারত থেকে এসেছে। পোস্ট দুইটার পেছনে উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম, কাওয়ালি অনুষ্ঠানের বৈধতা তৈরি করা। কি দিন আসলো!

আমার দিনরাত এখন ইলহামকে ঘিরে। ফলে ওর বাইরে দুনিয়াতে কি হচ্ছে তা জানার সময়ও পাই না। কিন্তু কখনো কখনো দুয়েকটা কথা না বলে পারা যায় না। কারণ এই দেশটাকে আমরা সবাই খুব ভালবাসি। ফলে দেশের মানুষদের মধ্যে যখন গোঁড়ামি দেখি, বুক ব্যথা করে। তখন মনে হয় কিছু কথা বলে যাই। আমরা একদিন থাকবো না, কিন্তু আমাদের সন্তানেরা থাকবে। তারা যেনো একটা সত্যিকারের সহনশীল সমাজ পায় যেখানে মানুষজন সাদা-কালো চিন্তা না করে ক্রিটিক্যাল চিন্তা করার সুযোগ পায়। সেই ভাবনা থেকেই এই কয়টা কথা বলতেছি।

আমাদের দেশে প্রধানত দুইটা ধারা। একটা দাবি করা হচ্ছে সেক্যুলার বলে, আরেকটা রিলিজিয়াস। দুইটা ধারারই চিন্তা এবং ইন্টেলেকচুয়াল হাইট বেদনাদায়ক ভাবেই সমান। দুই দল থেকেই বছরের পর বছর মানুষজনকে ঘৃণার বিষ গিলানো হইছে। দুইটারই মন্ত্র এক- হয় তুমি সাদা, নয় কালো! হয় তুমি বন্ধু, নয় শত্রু। সাদা আর কালোর মাঝখানে যে গ্রে বলে একটা এরিয়া আছে সেটা আমাদের মাথায় মনে হয় আর নাই। ফলে ঢালাও ভালোবাসা আর ঢালাও ঘৃণা নিয়াই চলতেছে আমাদের এইসব দিনরাত্রি।
যে কারণেই একদল কাওয়ালি শুনলেই তেড়ে আসে, আরেকদল হিন্দি শুনলেই যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠে।

কিন্তু এটা আমাদের মাথায় ঢোকে না পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইয়াও আপনি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বা কাওয়ালি কিংবদন্তি ফরিদ আয়াজের গুণমুগ্ধ হতে পারেন। জমিদারি আমলে করা কলকাতা কেন্দ্রিক উচ্চবর্ণের হিন্দুদের অত্যাচারের নিন্দা করেও আপনি শিবকুমার শর্মা বা এ আর রহমানের ভক্ত হতে পারেন। কিন্তু এইসব একচোখা সাদাকালো বুদ্ধিজীবীতা কিংবা ধর্মীয় নেতাদের বয়ান আপনারে ক্রিটিকালি কিছু ভাবতে দেয় না, আপনি গ্রে এরিয়া দেখতে পারেন না। আপনি তখন হয় পক্ষে নয় বিপক্ষে থিওরির সাবস্ক্রাইবার হন। আপনি তখন "যে বিমান পাকিস্তানের উপর দিয়ে যায়, সেই বিমানে চড়ি না" ধরনের বয়ান তৈরি করেন। কিংবা যদি বিপরীত পথের হন, তখন ভারতীয় দেখলেই আপনার অসহ্য লাগে, কিংবা মুসলমান হয়ে পুজায় বা বড়দিনে শুভেচ্ছা জানাইলে আপনার মাথায় রক্ত উঠে যায়।

এই বিগোট্রিই আমাদের জাতির বিকাশে প্রধান বাধা মনে হয় আমার কাছে। এটার চর্চা যতদিন বন্ধ না হবে ততদিন আমাদের হয়তো কুয়ার ব্যাঙ হয়েই থাকতে হবে। এ বড় আশংকার কথা।
 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭