ইনসাইড বাংলাদেশ

আবার কি লকডাউনে যাবে দেশ?


প্রকাশ: 13/01/2022


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ শতাংশের বেশি নতুন আক্রান্ত হয়েছে। আবার তিন মাস পর বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার অতিক্রম করেছে। একটি দেশে ৫ শতাংশের বেশি যদি করোনায় আক্রান্তের হার হয় তবে সেটি বিপজ্জনক মনে করতে হবে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ১-২ এর মধ্যে ছিলো, কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী এবং নতুন করে এই করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধির ফলে মৃত্যুও বেড়েছে। গতকাল যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৩ জন, সেখানে আজ দুই অংকের কোঠায় পৌঁছেছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা, চব্বিশ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১২জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে আরো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এবং হার। এই পরিস্থিতিতে সরকার কি করবে?

ইতিমধ্যে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছেন। এই ১১ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করা, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক, রেস্টুরেন্টে খেতে হলে করোনার সনদ দেখানো এবং ১২ বছরের বেশি শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা ছাড়া স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকে তাহলে এই সমস্ত বিধি-নিষেধ যথেষ্ট হবেনা। সরকারকে অন্যরকম চিন্তা করতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ডিসেম্বর থেকেই করোনা সংক্রমণ নতুন করে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, চলতি মাসের মধ্যেই ইউরোপের অর্ধেক মানুষ করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হতে পারে। এটি ঘটার পরেও ইউরোপের দেশগুলো এখন পর্যন্ত লকডাউনে যায়নি। যদিও ইউরোপের কিছু কিছু দেশ বেশকিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে কিন্তু এসব বিধি-নিষেধ মানতে সেখানকার জনগণ অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মিছিল এবং অন্যান্য কর্মসূচীও দৃশ্যমান হচ্ছে। যুক্তরাজ্য করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আপাত কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করলেও তারা লকডাউনে যাচ্ছেনা। লক্ষণীয় বিষয় হলো, তৃতীয় পর্যায়ে যে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই লকডাউনের পথে যাচ্ছেনা। শুধুমাত্র চীন, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ কিছু কিছু লকডাউনে গেছে। চীন ছাড়া সব দেশই লকডাউনের বিরুদ্ধে ব্যাপক জন-প্রতিবাদ লক্ষ্য করা গেছে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ কি আবার লকাডাউনে যাবে কিনা, এই প্রশ্ন সামনে এসেছে।

সরকার যদিও বলছে যে, লকডাউনের ব্যাপারে তাদের এখন পর্যন্ত চিন্তা-ভাবনা নেই, এটা তাদের শেষ ব্যবস্থা। সবকিছু বিচার-বিবেচনা করার পরেই তারা লকডাউনে যাবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, গত দুই বছরে করোনায় বাংলাদেশে যে ক্ষতি হয়েছে এই বাস্তবতায় নতুন করে লকডাউন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কাজেই নতুন করে লকডাউন দেয়ার সম্ভাবনা খুবই সীমিত বলে সরকারের নীতি-নির্ধারক সূত্রগুলো বলছে। বরং সরকার মাস্ক পরা, রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন জনসমাগম নিষিদ্ধ করাসহ বিধি-নিষেধগুলো যেন কঠোরভাবে মানা হয় সে ব্যাপারেই নজর দিচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে যদি করোনার সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি হয়তো পালটে যেতে পারে। লক্ষণীয় ব্যাপার যে, অন্য দেশগুলোতে ওমিক্রনের প্রভাব বাড়লেও বাংলাদেশে এখনো ওমিক্রণের হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশে আক্রান্তের হারই শুধু বাড়বে না, মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বাড়তে পারে। সেজন্য করোনা মোকাবিলায় এখনই যদি স্বাস্থ্যবিধির প্রতি জোর না দেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তবে কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলছেন, স্বাস্থ্যবিধির চেয়েও বুস্টার ডোজের উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং টিকা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। টিকা কার্যক্রম বাড়িয়েই এখন একমাত্র করোনা প্রতিরোধ সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন। তাই করোনা সংক্রমণ বাড়লেও এখনই সরকার লকডাউন দিবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭