ইনসাইড বাংলাদেশ

চীনের ফাঁদে বাংলাদেশের কূটনীতি


প্রকাশ: 13/01/2022


Thumbnail

একটা সময় ছিলো বাংলাদেশ সকল দেশের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলতে এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে কেউই নেতিবাচক কোন মনোভাব ব্যক্ত করতে না। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ দমন, জঙ্গিবাদ দমন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এসব বিবেচনা কারণেই ২০১৪ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জন করে তখনও বাংলাদেশের ওই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেয়। ২০০৭ সালে যখন ওয়ান-ইলেভেন সরকার আসে তখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহল অনির্বাচিত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরও বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বাগত জানায় বিভিন্ন মহল। এরকম একটি অবস্থার পর গত দুই বছরে হঠাৎ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর নাখোশ হলো কেন? এর বিশ্লেষণে অনেকে মনে করছেন যে, বাংলাদেশ হয়তো চীনের কূটনীতির ফাঁদে পড়েছেন। চীনের কারণেই বাংলাদেশে কোয়াডে স্বাক্ষর করছে না এবং কোয়াডে স্বাক্ষর না করার কারণে বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে।

চীন ইতিমধ্যে বলেছে যে, কোয়াডে যদি বাংলাদেশে যোগদান করে তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হবে। যদিও পরবর্তীতে চীনের রাষ্ট্রদূত এই বক্তব্য অস্বীকার করেছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, চীনের সাথে অতি আন্তরিকতা বাংলাদেশের জন্য বা এক ধরনের বিপদ বয়ে আনছে, বাংলাদেশে চীনের কূটনীতির জালে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হতে বসেছে। এরকম দুটি দেশ হলো শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপ। দুটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন নাজুক। সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। একই আবেদন মালদ্বীপ করেছিল কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মালদ্বীপকে এ ধরনের সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। যদিও বাংলাদেশ এখন চীনের ঋণের পরিমাণ দুই অঙ্কে পৌঁছায়নি। এটি ৪ থেকে ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহীতা। চীনের চেয়ে জাইকার সঙ্গে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি।

কাজেই, বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বলছেন যে, বাংলাদেশে এখনও চীনের ঋণের জালে আবদ্ধ হয়নি। তবে কূটনীতিক জালে যে আবদ্ধ হয়েছে তা মোটামুটি স্পষ্ট। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেমন পছন্দ না তেমনি পছন্দ না প্রতিবেশী দেশ ভারতের। তাছাড়া চীনের সঙ্গে নৈকট্যের কারণেই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক করছে বলে বিভিন্ন বিভিন্ন মহল মনে করছে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি সফরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর যাওয়ার কথা ছিলো, শেষ পর্যন্ত তিনি যাননি। ধারণা করা হচ্ছে যে, ভারতের আপত্তির কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর বাতিল হতে পারে, যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের ধারণাকে অস্বীকার করে বলেছে, ভারতের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ভর করে না। এটাও বলছেন যে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ব্যক্তিগত কারণেই শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সফরে যেতে পারেনি। সামনে ওআইসি সম্মেলন এবং সেখানে বাংলাদেশ কি করে সেটিও দেখার বিষয়। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে ভারতের যতটা না মাথাব্যথা তার চেয়ে বেশি মাথাব্যথা এখন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে এবং এটি চীনের প্রভাবের কারণেই করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। আর এই সমস্ত কারণে কূটনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, বিশেষ করে চীনকে যারা ঠেকতে চায় তারা এখন ক্রমশ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭