ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

কতবার মারা গেলেন হারিছ চৌধুরী?


প্রকাশ: 14/01/2022


Thumbnail

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে বিএনপি নিজেই নিজের ফাঁদে পড়েছে। তাকে মৃত বানিয়ে তার বিরুদ্ধে সমস্ত ওয়ারেন্ট এবং মামলা আড়াল করার যে প্রয়াস বিএনপির বিভিন্ন মহল করেছিল, সেই প্রয়াসে বিএনপি নিজেই ধরা পড়েছে। এখন পর্যন্ত হারিছ চৌধুরীর তিনটি মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, যুক্তরাজ্য শাখার বিএনপির সভাপতি মালেক দাবি করেছিলেন যে, হারিছ চৌধুরী কখনো লন্ডনে আসেননি। অথচ হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে মালেকের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে-ফিরছে। এই ছবিটি ২০১৮ সালের। অর্থাৎ ২০১৮ সাল থেকেই হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন। এখন পর্যন্ত হারিছ চৌধুরীর যে সমস্ত মৃত্যুর খবর জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে-

১. হারিছ চৌধুরীর ভাই সিলেট বিএনপির সহ-সভাপতি দাবি করেছেন যে, হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। তার বর্ণনা মতে, তিনি প্রথমে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন। এরপর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মারা যান। কিন্তু তার এই বক্তব্যের কোন সত্যতা এনএইচএস-এ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল মেডিকেল সার্ভিসের (এনএইচএস) তথ্য অনুযায়ী হারিছ চৌধুরী নামে কোন ব্যক্তি ২০২০ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে মৃত্যুবরণ করেননি।

২. হারিছ চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুর খবর জানাচ্ছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মালেক। তিনি এক অবিশ্বাস্য গল্প ফেঁদেছেন। তিনি দাবি করছেন, হারিছ চৌধুরী কখনোই বাংলাদেশ থেকে বের হননি। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে জানিয়েছেন যে, হারিছ চৌধুরী জকিগঞ্জ এলাকা দিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং সেখানেই তিনি ছিলেন। ভারতেই তিনি দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন। তার কোনো ভাবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে হারিছ চৌধুরীর বাংলাদেশী পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায় এবং সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে তিনি আর বাংলাদেশে থাকেন না। অন্য কোনভাবে বাংলাদেশে আসার কোন সম্ভাবনা আছে কিনা এটি নাকচ করে দিয়ে আইনশৃঙ্খলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, এটা অসম্ভব, হারিছ চৌধুরী মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। তিনি একাধিক মামলায় দণ্ডিত। কাজেই তিনি ঢাকায় আসবেন, বোনের বাসায় থাকবেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে দেখবেন না, বিএনপি নেতারা দেখবেন না এটি অবিশ্বাস্য, অবাস্তব এবং কোনভাবেই সম্ভব নয়। কাজেই হারিছ চৌধুরীর বাংলাদেশে মৃত্যুর খবরটিও একেবারেই আষাঢ়ে গল্পের মত।

৩. এখন অনুসন্ধান করতে গিয়ে হারিছ চৌধুরী তৃতীয় মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যে আবেদন করেছিলেন সেই আবেদনে তিনি তার পিতা হারিছ চৌধুরীকে মৃত দেখিয়েছেন। ২০১৯ সালে সামিরা তানজিন চৌধুরী ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং এই নাগরিকত্বের যে আবেদন পত্র দেখা গেছে সে আবেদন পত্রে তিনি হারিছ চৌধুরীকে মৃত দেখিয়েছেন। শুধু সামিরা তানজিন চৌধুরী নয় ছেলে নয়, ছেলে নায়েম শাফি জনি, এবং স্ত্রী হোসনে আরা চৌধুরীও হারিছ চৌধুরীকে তাদের কাগজপত্র মৃত দেখিয়েছেন। ধারণা করা হয়, হারিছ চৌধুরী যেহেতু মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল, ইন্টারপোলে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিলো, সে কারণেই তার পরিবারের সদস্যরা তাঁকে মৃত দেখিয়েছেন এবং হারিছ চৌধুরী তাদের সঙ্গেই যে লন্ডনে বসবাস করছেন, এটি মোটামুটি নিশ্চিত।

তাহলে হারিছ চৌধুরী তিনটি মৃত্যুর মধ্যে কোনটি সত্যি? তিনি কি আদৌ মারা গেছেন? একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, হারিছ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেননি। বরং একটি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। নানা কৌশলগত কারণে হারিছ চৌধুরীকে এখন মৃত দেখানো হচ্ছে। এই মৃত দেখানোর মধ্যেই হারিছ চৌধুরীর যে সমস্ত সম্পদ ছিলো বিভিন্ন দেশে সে সম্পদগুলো তার পরিবারের সদস্যরা ভাগ-বাটোয়ারা করেছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, দেশে অধিকাংশ সম্পত্তি ক্রোক হয়েছে। তার যে বেনামী সম্পত্তিগুলো ছিলো সেগুলো তার ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রীর নামে আগেই হস্তান্তর করেছিলেন। দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডায় হারিছ চৌধুরীর বিপুল সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদগুলোর মালিকানা তার স্ত্রী, পুত্র এবং কন্যার নামে হস্তান্তর করার জন্যই হয়তো হারিছ চৌধুরী এই নাটকটি সাজিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, গত বছরের আগস্টে যদি হারিছ চৌধুরী মারা যান তাহলে ডিসেম্বরে তারেক জিয়ার বাড়ি থেকে কে বের হলো? ডিসেম্বরে অন্তত ৩ দিন হারিছ চৌধুরী কালো রংয়ের একটি একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে করে তারেক জিয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন, এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত সিসিটিভিও এখন যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে রয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭