ইনসাইড পলিটিক্স

তৈমুর কি পাবেন?


প্রকাশ: 14/01/2022


Thumbnail

আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের প্রচারণা। বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার হাতি মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় নির্বাচন আলাদা আবহ পেয়েছে এবং নির্বাচনী প্রচারণা জমজমাট হয়েছে, একথা সকলেই স্বীকার করবেন। এই নির্বাচনের প্রচারণা করতে গিয়ে তৈমুর আলম খন্দকারকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ হারিয়েছেন, বিএনপি তাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তাছাড়া এই নির্বাচনী প্রচারণার ফলে তার বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেই তিনি দাবি করেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ঠিক আগেই প্রশ্ন উঠেছে, এই নির্বাচন করে তৈমুর কি পাবেন?

এই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকারের জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। নাটকীয় কোনোকিছু না ঘটলে শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে হয়তো তিনি পরাজিত হবেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা এখনই তৈমুর আলম খন্দকারের পরাজয় মানতে রাজি নন। তারা মনে করছেন যে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি এবং শেষ পর্যন্ত যদি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে নাটকীয় কোন ফলাফল করতে পারে। তবে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো যে, এই নির্বাচন সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত দেশের অন্যান্য নির্বাচনগুলোর মতো হয়নি। বরং এই নির্বাচনে সমান্তরাল গতিতে দুই পক্ষই প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছে এবং এই প্রচারণার মধ্যে তেমন কোনো বাধা-বিপত্তি লক্ষ্য করা যায়নি। ভোটের দিন কি হবে সেটি একটি বড় বিষয় এবং শেষ পর্যন্ত যদি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয় তাহলে ভোটের ফলাফল তৈমুর আলম খন্দকারের অনুকূলে যাবে বলে এখন পর্যন্ত তৈমুর আলমের শিবির মনে করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি তৈমুর আলম খন্দকার পরাজিত হন তাহলে কি তিনি সব হারাবেন? একদিকে তিনি বিএনপির নেতৃত্ব হারিয়েছেন, অন্যদিকে নির্বাচনেও যদি পরাজিত হন তাহলে তিনি কি পাবেন?

নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এই নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন তৈমুর আলম খন্দকার অনেক কিছুই পাবেন। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিলো। তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে সেখানে সম্প্রতি তারেকপন্থীদের উত্থান ঘটেছিল এবং তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির রাজনীতিতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হলো। এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির একক নেতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জে আবির্ভূত হবেন। এছাড়াও এই নির্বাচনের মাধ্যমে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপিকে সংগঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান এবং আইভীর জনপ্রিয়তা দাপটে বিএনপি ম্লান ছিলো এবং সাংগঠনিক ভাবে খুবই দুর্বল অবস্থায় চলে গিয়েছিল। এই সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং এটি বিএনপিকে ভবিষ্যতে সুযোগ করে দিবে।

আর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারাই বলছেন যে, নির্বাচনের পর এই অব্যাহতি তুলে নেওয়া হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কাজেই, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে যদি তৈমুর আলম খন্দকার হেরেও যান তাহলে এই নির্বাচনে তিনি অনেক কিছুই পাবেন। শুধু এটুকুই নয়, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে তৈমুর আলম খন্দকারের আসল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন শামীম ওসমান। সেলিনা হায়াৎ আইভী তার আত্মীয় বটে এবং দুইজনই স্বীকার করেছেন যে, তারা চাচা-ভাতিজি। আর এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত যদি আইভী জিতে তাহলে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। বিএনপি-জামায়াত যতটা না আইভীকে ভয় পায়, তারচেয়ে বেশি ভয় পায় শামীম ওসমানকে। বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, নারায়ণগঞ্জে আইভী বিএনপির জন্য ভালো। কারণ, আইভী একটি সমঝোতার রাজনীতি করেন এবং সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার নীতি তার রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে, শামীম ওসমান বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপারে আগ্রাসী সব সময়। কোন অবস্থাতেই তিনি বিএনপি-জামায়াত যেন নারায়ণগঞ্জে মাথা তুলে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকেন। কাজেই তৈমুর আলম খন্দকার পরাজিত হওয়ার পরও আইভীর বিজয় নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানকে কোণঠাসা করবে, এটি তৈমুর আলম খন্দকার এবং বিএনপির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে। কাজেই এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে তৈমুর আলম খন্দকার অনেক কিছুই পাবেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭