ইনসাইড বাংলাদেশ

পলাতক অবৈধ অভিবাসী, জঙ্গিরাও গুমের তালিকায়


প্রকাশ: 15/01/2022


Thumbnail

ইমরান (ছদ্মনাম) অবৈধ পন্থায় অভিবাসন করতে গিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিলো তিনি ইতালিতে যাবেন। কিন্তু সেখানে এক মর্মান্তিক নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুর পর তাদেরকে শনাক্ত করে বিবিসি এবং এই তালিকা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম। সেই তালিকায় ইমরান আহমেদের নাম আছে। আবার গুমের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে 'মায়ের আঁচল' নামে একটি বিএনপিপন্থী এনজিও থেকে সেই তালিকায় ওই ব্যক্তিটির নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ ওই ব্যক্তির পরিবার নিশ্চিত করেছে যে, তিনি অবৈধ পন্থায় ইউরোপে যেতে চেয়েছিলেন এবং সেখানে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই পরিবার মরদেহ পায়নি কিন্তু তাদেরকে একটি এনজিও থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে তিনি ওই নৌকার ছিলেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন।

আইওএম এর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর একটি বিপুলসংখ্যক নাগরিক অবৈধ পন্থায় অভিবাসন করতে যান। এই অভিবাসন প্রক্রিয়া যেতে গিয়ে অনেকে মৃত্যুবরণ করেন, অনেকেই তাদের পরিচয় গোপন করেন, অনেকেই তাদের আসল পরিচয় মানুষকে জানান না। ফলে কাগজে-কলমে দেখা যায় যে, ওই ব্যক্তি নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছেন। আর সেই নিখোঁজ ব্যক্তিকে বিএনপি-জামায়াত এবং অন্য গোষ্ঠীরা গুম বানিয়ে ফেলে। বাংলাদেশ যেকোনো ব্যক্তি নিখোঁজ হলেই তাকে গুম বলে চালিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা হয়েছে তার একটি উদাহরণ এটি। শুধু এ রকম একটি ঘটনা নয়, ভোলায় দুই পক্ষের গোলযোগে একজন ব্যক্তি একজন ব্যক্তি মামলা করলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হলো। হত্যা মামলা নিয়ে তিনি প্রথমে ঢাকায় পালিয়ে এলেন। ঢাকা থেকে তিনি যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে চলে যান এবং সেখানে তিনি দীর্ঘদিন অবস্থান করার পর ভারতে ধরা পড়েন এবং এখন তিনি ভারতে জেলে অবস্থান করছেন। অথচ মায়ের আচলে ওই ব্যক্তির নাম দেওয়া হয়েছে তিনি গুম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা সেটিকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে প্রচার করা হয়।

বাংলাদেশে প্রতিবছর বিভিন্ন কারণে মানুষ নিখোঁজ হয়। কেউ স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়, কেউ বাধ্য হয়ে নিখোঁজ হয়। সাধারণত ঋণগ্রস্ত হয়ে মানুষ নিজের স্থান থেকে অন্য স্থানে অভিবাসী হন এবং নিখোঁজ অবস্থায় থাকেন। এই নিখোঁজ ব্যক্তিকে যখন গুম হয়েছেন বলে বলা হয়, তখন সেটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার বটেই। মায়ের আঁচল থেকে যে গুমের তালিকা তৈরি করা হয়েছে সে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, যারা বিভিন্ন কারণে নিখোঁজ হয়েছেন যেমন- ঋণগ্রস্ত হওয়ার কারণে, জমিজমার বিরোধের কারণে, মামলা-মোকদ্দমার কারণে। তাদের কাউকে কাউকে যারা অবৈধ পন্থায় অভিবাসনের জন্য বিদেশ চলে গেছেন এবং কোন যোগাযোগ রাখছেন না। আর যারা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করতে বিদেশে গেছেন এবং এখন আর দেশে ফিরছেন না, দেশের সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখছেন না, এরকম কোন কোন ব্যক্তিকে গুমের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে হারিছ চৌধুরী ঘটনার পর এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৪ বছর পরিচয় গোপন করে হারিছ চৌধুরী ছিলেন। যদি তার কন্যার বক্তব্য সত্যি হয় তাহলে তিনি বাংলাদেশের মধ্যেই আত্মগোপন করেছিলেন এবং বাংলাদেশে এভাবে আত্মগোপন করে থাকা সম্ভব। বিএনপির অনেক নেতা জেল-জুলুমের ভয়ে এরকম আত্মগোপনে আছেন বলে মনে করা হয়। তাহলে কি তারা গুম হয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা এখন জরুরি হয়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই যাদেরকে গুমের তালিকায় দেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে একটি নির্মোহ অনুসন্ধান দরকার এবং এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে একটি হালনাগাদ তথ্য প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। না হলে সরকারের বিরুদ্ধে গুম অস্ত্র প্রয়োগের বাড়াবাড়ি রকমের প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না। আর এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭