ইনসাইড বাংলাদেশ

বিদেশে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার: পাসপোর্ট বাতিল করে কি হবে?


প্রকাশ: 15/01/2022


Thumbnail

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, বিদেশে বসে যারা বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের করছেন তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, এই সিদ্ধান্তটি যথাযথ হয়নি এবং এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশে যারা বসবাস করে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার করছে তারা আরও লাভবান হবে। এর ফলে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি পাবে। একজন কূটনীতিক বিশ্লেষক বলছেন যে, যারা বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে তাদের কারোরই বাংলাদেশ পাসপোর্ট নাই। তারা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বিদেশে বসে অপকর্ম করছে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, এই সমস্ত অপপ্রচারকারীদের শীর্ষ ব্যক্তি হলেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তারেক জিয়ার ২০১৩ সালের পর থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নাই, তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করেননি। ইতোমধ্যে তিনি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন আছে, নাগরিকত্ব না পেলেও তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। এই পাসপোর্ট বাতিলের ঘটনার ফলে তারেক জিয়া প্রত্যক্ষভাবে লাভবান হবেন। কারণ, তিনি ব্রিটিশ প্রশাসনে দেখাতে পারবেন যে, বাংলাদেশ সরকার তার ওপর প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে এবং এর ফলে লন্ডনে বসে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার করলেও ব্রিটিশ প্রশাসন তার ব্যাপারে সহানুভূতি দেখাতে পারে। কারণ তারা মনে করবে যে, বাংলাদেশের সরকার তার ওপর নাখোশ।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এই পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত সেই আবেদন বিবেচনার সুযোগকে সীমিত করে দিবে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। ব্রিটেনে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের আরেক নাটের গুরু হলেন ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান। তার বাংলাদেশের পাসপোর্টই নেই। বিদেশে বসে অপপ্রচারকারীদের আরেকজন হলেন, তাজ হাশমী। তাজ হাশমীর বাংলাদেশী পাসপোর্টই নেই, তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে আছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে একজন বহিষ্কৃত কর্নেল শহীদ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তিকর এবং বিষেদাগার করছেন। এই ব্যক্তিরও বাংলাদেশী কোন পাসপোর্ট নেই। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। এটি তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বিবেচনা করার ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করবে। কারণ, তিনি দেখাতে পারবেন যে বাংলাদেশে তার জন্য নিরাপদ নয়।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে যে সমস্ত ব্যক্তিরা অপপ্রচার করছেন তারা সকলেই রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করে বসবাস করছেন। তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করেন না এবং বাংলাদেশ সরকার যখন তাদের পাসপোর্ট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিলো তখন যারা রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং এখনও যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের নিষ্পত্তি হয়নি তাদের জন্য উপকার হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে কনক সরওয়ার, ইলিয়াস হোসাইনসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশবিরোধী এ ধরনের অপপ্রচার করছেন। এদের কারোরই বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট নেই। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কারা কোন বিবেচনায় এরকম পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলো সেটি একটি বড় প্রশ্ন বটে। কারণ, এর ফলে এই অপপ্রচারকারীদেরকে সুযোগ করে দেওয়া হলো এবং ঐ সমস্ত দেশে তাদের থাকার এক ধরনের গ্যারান্টি দেওয়া হলো। সে ক্ষেত্রে করণীয় কি করা উচিত ছিলো, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কূটনৈতিকরা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানত কয়েকটি বিষয়ে করণীয়।

প্রথমত, যে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই অপপ্রচারগুলো করছেন সেই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে, সেই অভিযোগ দায়ের এখন পর্যন্ত কতটুকু করা হয়েছে এবং এস এই অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে সরকার কতটুকু তৎপর এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই সমস্ত চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে প্রচার বন্ধ করতে হবে। যদি ফেসবুক-ইউটিউব এই সমস্ত অপপ্রচার গুলো বাংলাদেশে প্রচারণা বন্ধ না করে তাহলে বাংলাদেশে সামরিক সময়ের জন্য হলেও ফেসবুক-ইউটিউবের মত যে সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ অপপ্রচারগুলো হচ্ছে সেগুলোকে বন্ধ করতে হবে এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বা ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে হবে তারা যেন বাংলাদেশের নীতি, আইন এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশী নীতিমালা অনুযায়ী কনটেন্ট প্রচার করে।

তৃতীয়ত, যে সমস্ত দেশে বসে এরা করছে সে সমস্ত দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রকে জানাতে হবে যে এই সমস্ত ব্যক্তিরা সাইবার সন্ত্রাসী। তারা তাদের দেশে বসে এই ধরণের অপপ্রচার করছে।

চতুর্থত, বিদেশে যে সমস্ত বাংলাদেশের দূতাবাস রয়েছে এবং সেখানে যারা আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রয়েছে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তারা যেন এদের অপপ্রচারের সম্পর্কে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়।

সর্বশেষ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নাগরিকদেরকে এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হতে হবে এবং এই সমস্ত অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিতে হবে, তাদের স্বরূপ উন্মোচন করতে হবে।

এসব না করে পাসপোর্ট বাতিলের মতো সিদ্ধান্তকে অনেকেই মনে করছে অপরিপক্ব এবং অবিবেচনাপ্রসূত।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭