হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। হারিছ চৌধুরী ঢাকায় মারা গেছেন বলে তার কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ট্যাবলয়েটে সাক্ষাৎকার দিয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু তার এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই মনে করছেন বিভিন্ন মহল। বিশেষ করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বলছে যে, হারিছ চৌধুরীর ঢাকা থাকার কথাটি অবাস্তব, ভিত্তিহীন এবং অলৌকিক। এটি অসম্ভব ব্যাপার।
উল্লেখ্য যে, ওয়ান-ইলেভেনের সময় হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এ সময় তিনি ঢাকার বাসা থেকে পালিয়ে সিলেটে যান এবং সেখানেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। এই ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়েই ২০০৮ সালে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যে, হারিছ চৌধুরী ভারতে অবস্থান করছেন। এমনকি বিএনপির কয়েকজন নেতা সেসময় ভারতে গিয়ে হারিছ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন, এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর পরপরই হারিছ চৌধুরী নিখোঁজ হয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন যে, আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি এতো দুর্বল নয় যে হারিছ চৌধুরী ঢাকায় থাকবেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিবেন, অথচ তার কোনো খবর পাওয়া যাবে না। এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য অনেকে মনে করছেন যে, হারিছ চৌধুরী যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশে আত্মগোপনই করে থাকেন, তাহলে হয়তো অনেক ব্যক্তিই এরকম আত্মগোপন করে আছেন, যাদেরকে এখন গুম করা হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। সেটি আরেকটি দিক।
কিন্তু এভাবে একজন মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল, একাধিক মামলায় দণ্ডিত ব্যক্তি দেশেই থাকবেন সেটি অসম্ভব। বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের কথা বাদ দেয়া হোক, ওয়ান-ইলেভেনের সময় শুরুতেই হারিছ চৌধুরীকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয় এবং তখনও তিনি পালিয়ে যান। সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। এই দুই বছরের মধ্যে হারিছ চৌধুরী ঢাকায় থাকবেন এবং তাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজে পাবে না এটি যুক্তি সঙ্গত নয়। নাটকের শেষ এখানেই নয়, ২০১৮ সালে হারিছ চৌধুরীকে লন্ডনে দেখা যায়। সে সময় লন্ডনে একটি বিএনপির পুনর্মিলনই অনুষ্ঠানে তারেক জিয়া প্রধান অতিথি ছিলেন, সেই অনুষ্ঠানে হারিছ চৌধুরীকে দেখা গিয়েছিল এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন লন্ডনে বিএনপির একাধিক নেতা। হঠাৎ করেই যুক্তরাজ্যে বিএনপির সভাপতি মালেক সাহেব কেন সাক্ষাৎকার দিয়ে বললেন তিনি তিনি কখনো লন্ডনে আসেননি সেটি একটি বিস্ময়। কারণ হারিছ চৌধুরী যে পুণর্মিলনি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সে পুণর্মিলনি অনুষ্ঠানে মালেকেরও ছবি ছিল। এখন প্রশ্ন হল যে, ২০১৮ তে হারিছ চৌধুরী লন্ডনে গেলেন কিভাবে ? এবং তার লন্ডনে থাকার খবরটিও কেন গোপন রাখা হল? বিভিন্ন মহল মনে করছেন যে, হারিছ চৌধুরীর বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন যেহেতু ভারতে থাকে কাজেই ভারতে অবস্থান করে যেকোনো প্রকারে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট যোগাড় করেছেন এবং এটি অসম্ভব নয়। এর আগে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত একজন খুনিও ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন, ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়েছিলেন, এমনকি ভারতের আধার কার্ডও গ্রহণ করেছিলেন। কাজেই এভাবে পাসপোর্ট নেয়া অসম্ভব নয়।
বিভিন্ন মহল বলছে যে, হারিছ চৌধুরী ২০১৮-১৯ সালে হারিছ চৌধুরীকে একাধিকবার বিএনপির কার্যক্রমের মধ্যে দেখা গিয়েছে এবং বিএনপির অনেক নেতার সঙ্গেই তার সে সময় যোগাযোগ হয়েছিল। এরপর তিনি আবার কিভাবে বাংলাদেশে এলেন সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। হারিছ চৌধুরী বাংলাদেশে যে পথেই আসুক না কেন তাকে কেউ আটকাবে না, চিনবে না সেটি অবাস্তব ব্যাপার। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, হারিছ চৌধুরীর যে সমস্ত শারীরিক বর্ণনা এবং যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য সেই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা একজন ভারতীয় ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এন এইচ এর তালিকায় যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ঐ ব্যক্তির নাম শুভাশীষ চৌধুরী। তার চেহারার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর চেহারার হুবহু মিল পাওয়া যায়। ঐ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় জানা গিয়েছিল যে, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং অন্যান্য জটিলতায় ভুগছেন। লন্ডনেই একাধিক বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন যে হারিছ চৌধুরীর বাংলাদেশে থাকা এবং একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করা এবং শেষ পর্যন্ত তাকে দাফন করা স্রেফ একটি আষাঢ়ে গল্প। কারণ, হারিছ চৌধুরী কোনো অজানা ব্যক্তি নন। তিনি যদি হাসপাতালে ভর্তি হন তার একটা ডেথ সার্টিফিকেট লাগবে। এই ডেথ সার্টিফিকেট তিনি কিভাবে নিলেন এবং তাকে কিভাবে দাফন করা হলো আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘুমিয়ে থাকলেও এটা অবাস্তব ব্যাপার। ধারণা করা হচ্ছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনাটি স্রেফ সম্পত্তিগুলোকে বাঁচানো এবং সম্পত্তিগুলোকে পুত্র কন্যার কাছে ভাগ বাটোয়ারা করারই একটি নীল নকশা। এজন্যই তাকে মৃত দেখানো হচ্ছে। যেহেতু লন্ডনে ডেথ সার্টিফিকেট জাল করা বা ভুয়া মৃত্যুর খবর করা প্রায় অসম্ভব সেজন্যই এখন বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেই হারিছ চৌধুরীকে মৃত দেখিয়ে জাল সার্টিফিকেট বা অন্যান্য বিষয়গুলো করা হয়ে থাকতে পারে। শুভাশীষই কি হারিছ চৌধুরী নাকি সেটি খতিয়ে দেখা দরকার বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।