প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে জয়লাভ করে হ্যট্রট্রিক করলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। সবগুলো কেন্দ্র অর্থাৎ মোট ১৯২ টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে নৌকা প্রতীক নিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ২৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীক নিয়ে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৭১ ভোট। তাদের ভোটের পার্থক্য ৬৯ হাজার ১০২।
এর ফলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) প্রথম দুইবারের মতো তৃতীয়বারও সেলিনা হায়াৎ আইভী তাঁর বিজয় ধরে রেখেছেন। রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে ভোট গণনা শেষে ১৯২ কেন্দ্র থেকে আসা প্রাথমিক তথ্যে সিটি নির্বাচনের এ ফল নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সংবাদকর্মীদের ভোটের এ ফল জানিয়েছেন।
এর আগে, সকালে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকালে ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের মেযর পদপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপি নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।
সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, এই শহরের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। তারা আমাকে ভোট দিতে আসছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন ভোটারদের ভোট দেওয়ার জন্য একটু সহজ করে দেয় সবাইকে। কোনো কেন্দ্র যেন স্লো না রাখে। সবাই যেন দ্রুত ভোট দিতে পারে।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা কেন্দ্রে ভোট দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার সাংবাদিকদের সামনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জেতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিকালে ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে-আমার কথা’ শীর্ষক বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, “নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আমাদের কার্যকালে সর্বশেষ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এটি ছিল আমার অনেক প্রত্যাশার স্থান। কারণ, আমি ইতোপূর্বে বলেছি যার শেষ ভালো, তার সব ভালো।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত ৫ বছরে যতগুলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আমার বিবেচনায় আমাদের প্রথম কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সর্বোত্তম।”
এবারের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ ভোটার ১৮৭টি ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এ নির্বাচনে ইভিএম’এ ভোট দিবেন ভোটাররা।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দু-দুবার নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারই মেয়ে আইভী ২০০২ সালের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আইভী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদম রসুল পৌরসভা বিলুপ্ত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনে আইভী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।