কালার ইনসাইড

বাপরে বাপ, শাটিকাপ!


প্রকাশ: 16/01/2022


Thumbnail

সে অনেক বছর আগের কথা। 

কলেজ লাইফের প্রথম বছরের শুরুর দিকে আমার গ্রামের বাড়িতে যাবার পরে দেখলাম বাজারের টিনের বেড়ায় বেড়ায় শোভা পাচ্ছে এলাকার স্থানীয় কিছু ভাইব্রাদারের ছোট ছোট করে জমানো টাকায় বানানো একটি নাটকের পোস্টার। ৩০ টাকা টিকেটের বিনিময়ে উপজেলা অডিটোরিয়ামে প্রদর্শিত হবে নাটকটি। এলাকার ভাইব্রাদারদের এমন সাহস আর উদ্দ্যোগে অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম। সেই সাথে প্রদর্শনীর একটা টিকেট কিনেছিলাম অগ্রহ থেকেই। 

প্রদর্শনীর দিন আমি তাদের কাজ দেখে অবাক। এতো কম বাজেটে শতভাগ সততা থাকলেই সম্ভব ওই মানের কন্টেন্ট বানানো। 


এর পরবর্তী সময়টাতে অঞ্চলভিত্তিক কিছু নির্মাতার কাজ দেখেছিলাম বেশ কয়েকটি ইউটিউবের কল্যাণে। বাংলাদেশে তখন কেবলমাত্র বাণিজ্যিক শর্টফিল্মের প্রচলন শুরু হয়েছে। কিন্তু একটা সময় পরে বাণিজ্যিক ধারার শর্টফিল্মগুলোর যায়গা দখল করলো প্রথম সারির অভিনেতারাই। ফলে অঞ্চলভিত্তিক যে অভিনেতারা বা নির্মাতারা শুরু করেছিলেন এই স্টাইলের কাজ তারা আটকে গেলেন সেখানেই। কারন আপনাদের সৃষ্টি করা ভিউয়ের বাজার। সেলিব্রেটি তকমা লাগানো অভিনেতা অভিনেত্রী ছাড়া ইউটিউব ভিত্তিক শর্টফিল্মগুলোর নাকি ভিউ আর কাটতি নাই বাজারে। সেলিব্রেটিরা যে পরিমাণ পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন সেটি দিয়ে ওই সময়ে অঞ্চলভিত্তিক নির্মাতাদের ইচ্ছা থাকলেও পিছিয়ে যাচ্ছিলেন কারণ দিনশেষে বাজেট আর সূযোগ নির্ভর করতো সেলিব্রেটি আর্টিস্ট আছে কি নাই তার উপরে। 


ওই সময়ে আমার দেখা অনেক নির্মাতা হারিয়ে গেছেন। ইচ্ছা থাকলেও তারা অনেকেই বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে পারেননি। ফলাফল একই বৃত্তে বন্দি ভিউ বানিজ্যে ডুবে যাওয়া অখাদ্য সব কন্টেন্টের জয়জয়কার আর মিছে হাকডাক।

যুগের পরিবর্তন আর সময়ের পরিক্রমায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আসতে শুরু করলো। বাংলাদেশও প্রবেশ করলো  ওটিটির যুগে। 

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশী ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে লিডার বিবেচনায় ”চরকি”অন্যতম। 


শুরুর দিকে চরকি প্রচলিত ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতো থাকলেও, চলতি বছরের শুরুতে হঠাৎ করেই বদলে গেলো চরকি! লোকাল কন্টেন্ট কাহাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হিসাবে সামনে আসলো ”শাটিকাপ”। 

রাজশাহীর স্থানীয় নির্মাতা, রাজশাহীর একঝাক অভিনয়শিল্পী যাদের দেখে এক সেকেন্ডের জন্য আপনার মনে হবে না এরা আমাদের দেশের তথাকথিত সেলিব্রেটি অভিনেতাদের থেকে দক্ষতায় কোনো অংশে পিছিয়ে। বরং হাকডাক ডাকা কিছু তথাকথিত সেলিব্রেটি ডিরেক্টরদের অনেকের অখাদ্যের চাইতেও উচ্চমানের কন্টেন্ট ছিলো “শাটিকাপ“। এই কন্টেন্টের কারো অভিনয় আপনার মাঝে বিরক্তি ধরাবে না, কারো ডায়লগ ডেলিভারি দেখে আপনার মনে হবেনা যে এই ছেলেটা আপনাদের এই রঙিন দুনিয়াতে কখনো সেলিব্রেটি ছিলো না। বরং প্রতিটি চরিত্রের অভিনয়ে আপনার মনে হবে এরা কি বাংলাদেশী অভিনেতা? একদম ছোট চরিত্র থেকে শুরু করে করে বড় চরিত্রগুলো, একদম পরিমিত অভিনয়ের সাথে পারফেক্ট ডায়লগ ডেলিভারি! 

এতো সুন্দর ডিটেইলিং সম্ভবত শেষ কবে কোনো বাংলা কন্টেন্টে দেখেছিলাম মনে আসতে চাইবে না খুব সহজে। সেই সাথে কি অসাধারণ স্ক্রিনপ্লের সাথে চমৎকার ডিরেকশন। 


শাটিকাপের সবচেয়ে ভালো দিক ছিলো অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফির সাথে রাশেদ শরিফ শোয়েবের  সাউন্ড ডিজাইন, সেইসাথে গোটা কন্টেন্টের মিউজিকটা। 

শুরুতে যে কথাগুলো বলছিলাম, চরকির উচিত শাটিকাপের ট্রেলারের ইফেক্টে যেভাবে চরকির ব্রান্ড কালারে যেভাবে ”Local” লেখাটি ফুটে উঠেছিলো সেভাবে সারা বাংলাদেশের শতভাগ লোকাল কন্টেন্টগুলোকে সামনে নিয়ে আসা। এতে করে চরকির কন্টেন্ট বৈচিত্রের সাথে সাথে স্বপ্ন পুষে রাখা ফিল্মমেকারেরাও বেরিয়ে আসবে। ঠিক যেভাবে চিলড্রেন ফিল্ম ফেস্টে দেখা তাওকীর ভাই আর সাকিব ভাইদের টিমটা হুট করে সামনে এসে একদম ঝড় তুলে দিলো গোটা বাংলাদেশে। 

এই টিমটা এমন সাহস আর সততা ধরে রাখলে আর দরকারি বাজেটটা পেলে বাংলা ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিটারেরও পাল্টিয়ে দেবার সামর্থ রাখে। 


শাটিকাপ দেখার পর দেশসেরা নির্মাটা অমিতাভ স্ট্যাটাস ছিলো এমন ”Urban aesthetics আর বড়লোকি film style এর গুষ্টিচুদে দিয়ে একটা অসাধারণ নির্মাণ “শাটিকাপ”।


চলুক ”শাটিকাপ উন্মাদনা”, জয় হোক বাংলা কন্টেন্টের।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭