দুই বছর পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এখন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। শেখ হাসিনা যেভাবে চান অথবা জনগণ যেভাবে চায় সেভাবে হয়তো সম্পূর্ণ হয়নি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দিকে তাকালেই দেখা যাবে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে, গণতন্ত্র সুসংহত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবেই কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ তৈরি হতে সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচন কমিশনও অন্যতম প্রতিষ্ঠান যেটি সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে যে কোনো নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নির্বাচন কমিশন সব সময় তাদের সঠিক দায়িত্ব যে ঠিকমতো পালন করেছে তা বলা বুকে হাত রেখে সম্ভব হবে না। তাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এর মধ্যেই কেউ অল্প অল্প প্রকাশ্যে করছেন কিন্তু ভিতরে-ভিতরে সবাই আলোচনা শুরু করেছেন। সেটি হচ্ছে, আমাদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন কেমন হবে। নির্দ্বিধায় বলা চলে, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে যার ভোট যাকে তিনি দিতে চান তাকেই দেবেন এবং এ সুযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচন হয়ে গেলে কিছু আলাপ-আলোচনা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই হয়। আমাদের দেশে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্খিত প্রার্থী শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ যিনি নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য নন তিনি কোনো একটি ওহি পেয়ে নির্বাচিত হবেন তা সম্ভব হবে না। এর মানে এই নয় যে একশ ভাগ নির্বাচনই সঠিক হবে, তা কোথাও সম্ভব নয়। তবে মোটামুটিভাবে নির্বাচন সঠিকভাবে পরিচালিত হবে। অনেকে এও বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এ নির্বাচন যেটা আমাদের দুই বছর পরে হবে তাতে তিনি কী ভূমিকা পালন করবেন। এটা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে শেখ হাসিনা নির্বাচন যাতে নির্বাচনের মতো হয় গণতান্ত্রিক পথে হয় তার জন্য আন্তরিক। তিনি যখন দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে, তখন তাঁর আকাঙ্খা ছিল যার ভোট তিনি দেবেন, যাকে খুশি তাকে দেবেন। তিনি তা প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন।
অনেকেই বলেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস কী? এক কথায় এর উত্তর- জনগণ। আমরা তাঁর বিগত দিনের যেসব কাজকর্ম দেখেছি এবং তিনি যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, যেভাবে যে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতে দিচ্ছেন তাতে এটা স্পষ্ট জনগণই তাঁর ক্ষমতার উৎস। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চারজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন সম্পর্কেও সামান্যতম কোনো নেতিবাচক আলাপ-আলোচনা কোথাও হয়নি। অর্থাৎ সবচেয়ে যোগ্যদেরই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন। দেশে যেটাই হোক না কেন, সরাসরি শেখ হাসিনার সেখানে কোনো হাত থাকুক বা না থাকুক, দায়দায়িত্ব কিন্তু তাঁর ওপরে পড়ে। আমি যদি ঘুরিয়ে বলি যে ভালো কাজটির কৃতিত্ব আমরা সবাই নিতে চাই কিন্তু যে কাজটি সঠিকভাবে হয় না তার সব দায়িত্ব সঠিকভাবে না হওয়ার জন্য আমরা দায়ী করি প্রধানমন্ত্রীকে। এটা একটা উদাহরণ যে আমাদের জুডিশিয়ারি, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং পার্লামেন্ট- এ তিনটি অঙ্গকেই তিনি সমানভাবে শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন। এই কারণের জন্যই নির্বাচন সঠিকভাবে হবে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকু তিনি করবেন এবং সফল হবেন। শেখ হাসিনা সম্পর্কে অনেকে অনেকভাবে মূল্যায়ন করেন। কিন্তু একটি মূল্যায়ন অনেকেই সঠিকভাবে করেন তিনি কাজটি করার পরে। তিনি যখন যে কাজটি সঠিকভাবে করেন, কাজটি করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অনেকেই বুঝতে সক্ষম হন না যে তিনি শেষ পর্যন্ত কাজটি সঠিকভাবেই সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। মোটামুটিভাবে এর ব্যতিক্রম প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই নেই। এজন্যই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে অনেকে বলছেন এবং আলাপ-আলোচনা করছেন যে আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে এখন দুর্বল হয়ে গেছে। আমি নিজেও বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের যে রকম শক্তিশালীভাবে চলা প্রয়োজন সেখানে কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু আমরা অচিরেই দেখতে পাব যে, সে ঘাটতিও ঠিক করে ফেলেছেন। অর্থাৎ শক্তিশালী আওয়ামী লীগকেই আমরা দেখব আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং সেখানে আওয়ামী লীগ সংগঠন হিসেবে কোনো উল্লেখ করার মতো দুর্বলতা আমরা দেখতে পাব না।
অনেকে লেখালেখি করেন প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন করবেন কি না। আমাদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে, গণতন্ত্র শক্তিশালী এবং দেশের উন্নতি ঠিকমতো করতে হলে কোন মন্ত্রীকে দিয়ে কীভাবে কাজ করাবেন তা প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই বোঝেন। আমাদের যে বিচার সে বিচার অনেক সময় একপেশে হয়। যেমন আমি যখন ঢাকার কোনো রাস্তা দিয়ে গাড়িতে যাই তখন আমি ওই রাস্তার অবস্থাই শুধু বুঝতে পারি। কিন্তু নেত্রী যদি ওই শহরের ওপর হেলিকপ্টার দিয়ে ঘোরেন তাহলে কিন্তু তিনি সব রাস্তার অবস্থা বোঝেন। সুতরাং আমার বিচার হবে একটি রাস্তার অবস্থা দেখে আর শেখ হাসিনার বিচার হবে সব রাস্তার অবস্থা দেখে, পর্যালোচনা করে। সুতরাং সার্বিকভাবে যেহেতু আমরা গণতন্ত্রে আছি সেহেতু যে কোনো জায়গায় যে কোনো মন্ত্রণালয়ে কোনো দুর্বলতা বা যেটাই থাকুক সেটা দেখা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সুতরাং আমার মনে হয় সে দায়িত্বটা আমরা তাঁর ওপরই ছেড়ে দিই এবং তা ছেড়ে দেওয়া হবে যুক্তিপূর্ণ। কেননা তিনি বুঝবেন যে কোন মন্ত্রীকে দিয়ে কখন কোন অবস্থায় কীভাবে মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। আগত দিনে আপনারা দেখবেন যখন যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে সঠিকভাবে সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অনেক মন্ত্রীর নামও কিন্তু একেবারে সাধারণ মানুষ না-ও জানতে পারে, এও ঠিক। কিন্তু এ কথাও সত্য, সেই মন্ত্রণালয়ের কাজ কি আপনারা কখনো পর্যালোচনা করে দেখেছেন সে কাজে কোনো গাফিলতি হচ্ছে কি না? আমি তো দেখি রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গ সঠিকভাবে চলছে। তা না হলে আমরা কী করে আজ মধ্য আয়ের দেশ হলাম? আমরা কী করে সামনের দিকে উন্নত দেশে পরিণত হচ্ছি? মানবাধিকার থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় আমাদের উন্নতি হচ্ছে। হ্যাঁ, কিছু কিছু জায়গায় হয়তো কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে, যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের দায়িত্ব যেভাবে পালন করা প্রয়োজন, অর্থাৎ কী দায়িত্ব পালন করলেন তা কি জনগণকে দেশে এবং বিদেশে জানানোর প্রয়োজন সেটা সঠিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে জানতে সক্ষম হচ্ছেন না। উদাহরণ হিসেবে মানবাধিকার কমিশনের কথাই বলি। মানবাধিকার কমিশনকে আরও সোচ্চার হতে হবে। যেমন এর আগে মিজানুর রহমান ছিলেন। তিনি কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় অন্ততপক্ষে এর থেকে বেশি ভোকাল ছিলেন। সুতরাং এসব প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাদের মিউ মিউ করে চললে হবে না। এটা কোনো আমলার কাজ নয়। এ কাজটি এমন লোকদের দিতে হবে যারা এ সম্পর্কে জানেন, বোঝেন। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এখন মানবাধিকার কমিশনে প্রয়োজনে সময় শেষ না হলেও একজন বিচারককে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককেও দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। অথবা যারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন কিন্তু সরাসরি দলের সঙ্গে যুক্ত নন তাদেরও দেওয়া যায়। কারণ তাহলে আমি মনে করি তারা এ দায়িত্বটি আরও ভালোভাবে পালন করতে পারবেন।
শেখ হাসিনার কিন্তু সব দিকেই দৃষ্টি আছে। কেউ যদি মনে করেন তাঁর দৃষ্টি কোনো দিকে ঠিকমতো নেই তাহলে ভুল করবেন। কারণ একটি পলিসি নিয়ে তিনি কাজ করেন। তিনি হইচই না করে বড় কিছু না করে বরং একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে এখন বর্তমান যুগে বুদ্ধিভিত্তিকভাবে রাজনীতি করেন। দেশ চালানো থেকে শুরু করে প্রত্যেক জায়গায় বুদ্ধিভিত্তিক সিদ্ধান্তই জয়ী হয়। তিনি বুদ্ধিভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই প্রতিটি কাজ করেন। যার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেমন আমি আপনাদের আমার ব্যক্তিগত উদাহরণ হয়তো হয়ে যাচ্ছে তবু দিচ্ছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্ব আমার ওপর দিয়ে এখনো এই বয়সে এসে তিনি আস্থা রেখেছেন। কেননা কমিউনিটি ক্লিনিক শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য। যাতে তারা কমিউনিটি ক্লিনিক চালায় সেজন্য না। তার সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে যাতে করে তারা বুঝতে পারে যে শেখ হাসিনা সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা শুরু করে আরও দেশের কী কী উন্নতি করছেন যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রাস্তাঘাট চার লেনের জায়গায় ছয় লেন, আজকে ইলেকট্রিসিটি ফেইলর বলতে নেই এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে আমি দিতে চাই না। যতগুলো স্পেশালাইজড হাসপাতাল হয়েছে যেমন ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিটি কিন্তু শেখ হাসিনার অবদান। সুতরাং তিনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এজন্যই সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে যে শেখ হাসিনা থাকলেই সব ঠিক আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন কি থাকবেন না তা জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু যেহেতু অতীত কাজ এবং বর্তমান কাজ প্রমাণ করে শেখ হাসিনার সমকক্ষ কোনো রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে তো নেই, বিশ্বে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। আমাদের দেশের রাজনীতি অনেক উন্নত দেশের চেয়ে কঠিন। যেমন একটি উদাহরণ দিই। আমেরিকার মতো জায়গায় যখন পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায় তখন তারা টার্ম ইউজ করে পুলিশ এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছিল যে নিজেকে রক্ষা বা জনগণকে রক্ষার জন্য গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। আর আমাদের দেশে হলে সেটাই মিডিয়ায় লেখা হয় যে বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। দেখেন একইভাবে ভাষার পার্থক্যের কারণে আমাদের এখানে হয়ে যায় যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একই জিনিস করা হয় আইন রক্ষার জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক লোক নিখোঁজ হয় তখন তাদের ব্যাপারে গুম শব্দ ব্যবহার করা হয় না। তাদের ব্যাপারে আলাদা শব্দ ব্যবহার করা হয়। আমি উদাহরণ হিসেবে বলছি, এ বিষয়গুলো আমাদের কিন্তু লক্ষ্য করতে হবে। র্যাব আজ একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান এবং এ প্রতিষ্ঠান সুসংগঠিত হওয়ার ফলে আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে এটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। হারিয়ে যাওয়া মানেই গুম নয়, এটা মনে রাখতে হবে। সবারই মনে থাকার কথা ফরহাদ মজহার খুব নামকরা লেখক। তিনিও হারিয়ে গেলেন। তারপর দেখা গেল কি তিনি এক বান্ধবীর সঙ্গে খুলনায় গেছেন। এ রকম অনেক ঘটনাও ঘটে। সুতরাং আমাদের এসব বিষয় পুরোটা না জেনেই আমরা যখন মন্তব্য করি তখন তা দেশের বিরুদ্ধে যায়।
এভাবে সব ক্ষেত্রে যে উন্নতি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যেন ষড়যন্ত্র না হয় সেজন্য আমাদের সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে আমাদের যে ডেমোক্র্যাটিক প্রসেস তাতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এখন কোনো দল যদি মনে করে তাদের নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা নেই তাহলে তারা অসাংবিধানিক পথে জেতার বা ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টা করলে তা হবে অনুচিত। বোঝা উচিত যারা দলীয় রাজনীতি করেন অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতা আসাকে সমর্থন করা তাদের পক্ষে উচিত হবে না। কারণ অসাংবিধানিক পথে যারা ক্ষমতায় আসে তারা কোনো দিন রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা প্রদান করে না। এতে মানুষেরও কোনো উপকার হয় না।
লেখক : প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা।