আবারও সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপরই আস্থা রাখলেন নারায়ণগঞ্জবাসী। প্রায় ৬৯ হাজার ১০২ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে পরাজিত করেন তিনি। এ নিয়ে পরপর তিনবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেন আইভী। তবে ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর এবং এবারের নির্বাচন তার জন্য ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিবারই তিনি প্রমাণ করেছেন, জনগণ তার সঙ্গে আছে। বলা হয়, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে নানাবিধ কারণে রাজনীতিবিদরা অজনপ্রিয় হয়ে যান। কিন্তু আইভীর হ্যাটট্রিক সেই মিথকে আবারও ভেঙে দিলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একবার পৌরসভার চেয়ারম্যান ও দুই দফায় সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে টানা ১৯ বছর ধরে নগরবাসীকে সেবা দিচ্ছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রত্যেক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন তিনি। ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থনে যখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তখন তার বড় পরিচয় ছিল, তিনি প্রয়াত পৌরপিতা আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে। সে সময় ক্ষমতাসীন দল বিএনপির প্রার্থী নুরল ইসলাম সরদারকে হারিয়ে চমক দেখান সদ্য রাজনীতিতে প্রবেশ করা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিপুল ভোটের ব্যবধানে সে সময় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে টানা নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সাধারণত দেখা যায় যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে 'এন্টি-ইনকমবেন্সি ফ্যাক্টর' ছাড়াও নানা রকম দোষ-ত্রুটি বের হয়। নানা রকমের দুর্নীতির অভিযোগ আসে এবং অনেক ক্ষেত্রেই একটি বা একাধিক প্রতিপক্ষ তৈরি হয়। কিন্তু সেলিনা হায়াৎ আইভী টানা বিজয়ী হয়েছেন। কেবল নারায়ণগঞ্জ সিটির উন্নয়ন নয়, দীর্ঘ এই রাজনৈতিক জীবনে তিনি লড়াই করছেন গডফাদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জ সিটির সামগ্রিক উন্নয়নসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার আইভী। নগরীর গুম-খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ-বিরক্ত নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে আইভীর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভুমিদস্যুতার বিরুদ্ধে আপোসহীন মনোভাব তাকে করেছে জনপ্রিয়। দেশবাসীর কাছে সেলিনা হায়াৎ আইভী নামটি এখন একজন সৎ ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন এক সাহসের বাতিঘরের। আইভী দীর্ঘ উনিশ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রমাণ করলেন তিনি জনপ্রিয়। টানা ক্ষমতায় থেকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখাকে বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে মনে করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ যদি দুর্নীতিমুক্ত থাকে, সঠিকভাবে কাজ করে এবং জনসম্পৃক্ত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগও যে অজনপ্রিয় হবে না, এই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তার একটি বড় প্রমাণ।