ইনসাইড আর্টিকেল

‘শুরু থেকেই অভিশপ্ত ছিলাম?’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/12/2017


Thumbnail

হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। অনেক পরিচয় তাঁর। সাবেক মার্কিন ফাস্টলেডি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণকালের ইতিহাসে এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। সর্বশেষ গত বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়েন তিনি। পপুলার ভোটে অনেক এগিয়ে থাকলেও হেরেছেন নির্বাচনে। সম্প্রতি প্রকাশিত হিলারি ক্লিনটনের লেখা ‘হোয়াট হ্যাপেনড’ বইতে উঠে এসেছে নির্বাচনে পরাজয় ও এর পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর মতামত ও উপলব্ধি। বইটির চুম্বক কিছু অংশের অনুবাদ দেওয়া হলো বাংলা ইনসাইডারের পাঠকদের জন্য:

আমি কি শুরু থেকেই অভিশপ্ত ছিলাম?

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আমার নির্বাচনী প্রচারণা সঠিক ভাবে হয়নি। হয়তো প্রার্থী হিসেবে আমি দুর্বল ছিলাম, অনেকেই আমাকে চায়নি। তবে এটা ভুললে চলবে না যে জনপ্রিয়তার ভোটে আমিই জিতেছিলাম। ঠিক এমনটি ঘটেছিল ২০০৪ এ জন কেরির সঙ্গে।

এখানে (বইয়ে) আমি বহুবার বলেছি, আমার কাছ থেকে জনগণের চাওয়া এবং জনগণকে আমার দেওয়ার ক্ষমতার মধ্যে মৌলিক কিছু অমিল অবশ্যই ছিল। আমি শিখেছি, সব ধরনের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে, যদি জনগণ ভগ্ন রাজনীতি ও নেতার সংস্পর্শে আসে। যখন মানুষ রেগে গিয়ে কাউকে দোষ দেয়, তখন কোনো পরিকল্পনাই আর কাজে আসেনা।

ব্যাপারগুলো ব্যক্তিগত সম্পর্কেও দেখা যায়। আমার এমন বন্ধুদের দেখেছি যারা তাদের সঙ্গীকে নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও সমাধানের উপায় না দেখে ঝগড়ায় মেতে থাকে। নির্বাচনের সময়ও ভোটার ও আমার ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল।

আমি যদি কোনো কাজে থাকি, যেমন সিনেটর বা সেক্রেটারি হিসেবে, তখন আমার কদর থাকবে। যদি কাজের প্রতিযোগিতায় নামি তখনই সব পাল্টে যায়। দলীয় আক্রমণ শুরু হয়। আমাকে অসৎ এবং অবিশ্বাসী হিসেবে দেখা শুরু হয়। সেটা তারা প্রমাণ করতে পারুক বা না পারুক। নির্বাচনের ফলাফল বা সমীক্ষা নিয়ে আমি আর চমকাই না। সবকিছুর পরেও যখন আমি স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসি, আমাকে সমর্থনের হার ভালোই ছিল। আমার দায়িত্ব ছিল সমস্যার সমাধান করা এবং জনগণকে সন্তুষ্ট করা। হয়তো সফল হইনি।

‘শেষে এসেই বিপত্তি’

প্রথমদিকে আমার সমর্থন অন্যদের তুলনায় বেশ ভালো ছিল। সেই হিসেবে পূর্বাভাসেও আমার অবস্থান বেশ শক্তিশালী ছিল। আমাদের বিভিন্ন টিম প্রতি রাতে জরিপ চালিয়েও দেখেছে। কিন্তু নির্বাচনের দিন তা আর ফলেনি। শেষে দেখলাম আমাদের অবস্থান কতটা ভঙ্গুর ছিল।

শেষদিনের ভোটে শক্তিশালী হয়ে ওঠে ট্রাম্প। অনেক অঙ্গরাজ্যে শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মত বদলে যায়। আর এদের ভোট পড়ে ডেমোক্রেটিকদের বিরোধী শিবিরে।

‘কোমি প্রভাব’

অনেক ভোটারই শেষ মুহূর্তে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এর প্রথম ও প্রধান কারণ এফবিআই ডিরেক্টর জিম কোমির অযাচিত হস্তক্ষেপ। ২৮ অক্টোবর আমার ইমেইল তদন্ত নিয়ে কোমির চিঠি ফলাও করে প্রচার পায়। কোমির চিঠির কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের শীর্ষ পাঁচটি জাতীয় দৈনিক অন্তত তদন্ত নিয়ে শতাধিক প্রতিবেদন ছাপে, যার অর্ধেকই প্রকাশিত হয় প্রথম পাতায়। অক্টোবর ২৯ থেকে নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত দেশের জাতীয় সংবাদের শীর্ষ ছিল ইমেইল তদন্তের বিষয়। এটি ট্রাম্পকে তাঁর অযাচিত মন্তব্যের রসদ যোগায়। আর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে কোমি সংশ্লিষ্ট প্রচারণায় এক কোটির ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করে রিপাবলিকানরা।

রাশিয়া থেকে ভালোবাসাহীন

একদম শেষে এসে সব ভেস্তে যাওয়ার দ্বিতীয় বড় কারণ ছিল রাশিয়া। আমার প্রচারণাতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি এবং ট্রাম্পকে নির্বাচিত করতে সাহায্য করে রাশিয়া। সিআইএ এর সাবেক প্রধান মাইকেল মোরেল এটাকে ` দ্য পলিটিক্যাল ইকুভ্যালেন্ট ৯/১১’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ইমেইলগুলো চুরি করা হয়েছিল এরং তা উইকিলিকসে সরবরাহ করা হয়েছিল। কিছু মিথ্যে সংবাদও এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ভোটারদের জন্য এই গল্পগুলো গুজব আর অনাস্থার জোগান দিয়েছে। কোনো আগুন না থাকলেও আগুনের ধোঁয়া আমাদের প্রচারণাকে ঢেকে দিয়েছিল।

কিন্তু এর কোনো প্রমাণ এখনো নেই্। অনেক সমালোচকের মতে, রাশিয়ার হস্তক্ষেপ নির্বাচনে কোনো প্রভাবই ফেলেনি। বিষয়টি সত্যিই অদ্ভূত।

অনেক এলাকার দোদুল্যমান ভোটাররা গুগলে উইকিলিকসের অনুসন্ধান করে। অন্যদিকে অনেক মানুষ তাদের ভোট দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে সব অভিযোগ এবং ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। তারা ভুল তথ্য পায় এবং রাশিয়ার অপপ্রচারগুলো জানতে পারে।

কোমির চিঠির প্রভাব এবং রাশিয়ার আক্রমণ- দুটির সংমিশ্রণ ছিল বেশ ধ্বংসাত্মক। ফ্লোরিডা, মিশিগান, উইসকনসিন এবং পেনসিলভানিয়াতে আমার জয়ের বড় সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আমি চারটিতেই হেরে যাই খুব কম ব্যবধানে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭