ইনসাইড পলিটিক্স

শুরুর আগেই শেষ হলো বিএনপির আন্দোলন


প্রকাশ: 18/01/2022


Thumbnail

আরেকবার গর্তে ঢুকে গেলো বিএনপি। শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেলো তাদের আন্দোলন। বিএনপি আশা করেছিল যে, বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুতে আন্দোলনে তারা মাঠ গরম করতে পারবে এবং পর্যায়ক্রমে খালেদা জিয়ার ইস্যু থেকে তারা জাতীয় ইস্যুকে সামনে আনবে। নির্বাচন কমিশন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে তারা একটি বড় ধরনের আন্দোলন করবে, এই আন্দোলন ক্রমশ এক দফা আন্দোলনে যাবে। কিন্তু শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেলো বিএনপির আন্দোলন। একাধিক কারণে বিএনপি আর আন্দোলনে থাকতে পারছেনা। তবে বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল কারণ হলো বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যখনই বিএনপি বড় ধরনের আন্দোলনে যাচ্ছে, তখনই অনেকগুলো প্রশ্ন বিএনপির সামনে আসছে। এর ফলে নেতৃত্ব ও কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি-বিভাজন প্রকাশ্য রূপ নিচ্ছে। আর এই বিভক্তি-বিভাজনের কারণেই বিএনপিকে আবার লেজ গুটিয়ে গর্তে ঢুকে যেতে হলো। সাম্প্রতিক সময়ে, বিএনপি আন্দোলন থেকে পিছু হটলো একাধিক কারণে।

১. বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের অনাগ্রহ: বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে যে আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল বিএনপির নেতৃবৃন্দ, সেই আন্দোলনে শুরু থেকেই বেগম জিয়ার পরিবারের সাথে তারেক জিয়ার একটা বিভক্তি ছিলো। বিশেষ করে শামীম এস্কান্দারসহ বেগম জিয়ার পরিবারের যে সমস্ত সদস্যরা ঢাকায় থাকেন তারা খালেদা জিয়ার মুক্তিতে এ ধরনের সহিংস আন্দোলনের ঘোরতর বিরোধী ছিল। কাজেই, এই আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন না বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ কেউই। যে কারণে বিএনপি এই আন্দোলনকে বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।

২. করোনার প্রকোপ: সারাদেশে হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি বিএনপির আন্দোলনকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই করোনায় আক্রান্ত হওয়া, বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার ফলে বিএনপির আন্দোলন থেকে পিছু হটা ছাড়া কোন উপায় ছিলনা। বিএনপির নেতারাই বলছেন, প্রকৃতিও আমাদের সহায়ক নয়।

৩. নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: বিএনপি যখন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ঠিক সে সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো এবং এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অবয়ব পরিষ্কার হলো। প্রমাণিত হলো যে, দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। এরকম অবস্থায় এখন যদি বিএনপি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করে সেটি হালে পানি পাবেনা। ফলে বিএনপিকে আন্দোলনের মাঠ থেকে পিছু হটতে হলো।

৪. বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল: বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরেই নানারকম অভ্যন্তরীণ কোন্দল তীব্রভাবে দানা বাঁধা ছিলো। কিন্তু আন্দোলনের মাঠে যখনই বিএনপি গেছে তখনই দেখা গেলো যে, বিএনপির মধ্যে সমন্বয়হীনতার, একেক নেতা একেকভাবে কথা বলে। বিএনপির কোন কোন নেতা সরকারের কাছে দাবি করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে। আবার বিএনপির নেতারাই বক্তব্য রাখছেন যে বেগম খালেদা জিয়ার তারা মুক্তি চান না। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে বের করে আনবেন। আসলে বিএনপির নেতারা কি চান তা স্পষ্ট ছিলনা। এর ফলে কর্মীদের মধ্যেও বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে । প্রথম দিকে উৎসাহ নিয়ে তারা মাঠে গেলেও তার পরবর্তীতে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে। 

৫. খালেদা জিয়ার অসুস্থতা: বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করেছিল। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া মুমূর্ষু। যেকোনো সময়ে তার যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে এ ধরনের কথাবার্তা বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখন দেখা গেলো যে বেগম খালেদা জিয়া সিসিইউ থেকে ক্যাবিনে চলে গেছেন তখন মানুষ বুঝতে পারলো যে বিএনপি আসলে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে এক ধরনের নাটক করতে চাইছে। আর এ কারণেই বিএনপির এই নাটক শেষ পর্যন্ত মানুষ তেমন একটি গ্রহণ করেনি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭