ইনসাইড গ্রাউন্ড

ছন্নছাড়া বিপিএল, দায় এড়াতে পারে কি বিসিবি?


প্রকাশ: 19/01/2022


Thumbnail

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দেশের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট বিপিএল। অনেক আশঙ্কাকে দূরে সরিয়ে অবশেষে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আসন্ন আসর। তবে এবারের বিপিএল আয়োজনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের যে চরম দায়িত্বহীনতা, অপেশাদারিত্বের চিত্র ফুটে উঠেছে তা হতাশ করেছে সকল ক্রিকেট প্রেমীদের। যে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন সহজ কথা নয়। বিপিএলের মতো আসর আয়োজন করতে হলে ক্ষুদ্র কিছু ভুল হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিপিএলের অষ্টম আসরের শুরু থেকেই যেনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বারবার নিজেদের ব্যর্থতা ফুটিয়ে তুলছিলো বিসিবি। 

আর মাত্র ৪৮ ঘন্টা পরই শুরু হচ্ছে বিপিএল। এবারের বিপিএল যেনো অন্য সবগুলো আসরকে ছাড়িয়ে গিয়েছে দায়িত্বহীনতার দিক থেকে। বিসিবির চরম দায়িত্বহীনতার বড় পরিচয় বিপিএলের জন্য ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম তথা ডিআরএস সিস্টেম রাখতে না পারা। বিসিবি নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য করোনাভাইরাসকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। অথচ বিপিএলের প্রায় একই সময়ে মাঠে গড়াতে যাওয়া পাকিস্তানের পিএসএলে ঠিকই থাকছে ডিআরএস। পাকিস্তান পারলে বাংলাদেশ কেনো পারেনি, এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবির উত্তর ছিলো তারা আগে থেকে সবকিছু পরিকল্পনা করে রেখেছিল। 

এমন বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ আয়োজন করতে হলে আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতে হবে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? তাহলে বিসিবি কেনো আগে থেকে পরিকল্পনা করে  রাখে নি সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। ব্যাপারটি এমন তো নয় যে, হঠাৎ করে বিপিএল শুরু হতে যাচ্ছে। বিপিএল শুরুর তারিখ থেকে শুরু করে সবকিছু বিসিবি নির্ধারণ করেছে, সে হিসেবে পর্যাপ্ত সময় রেখে ডিআরএস প্রদানকারী কোম্পানি হক-আই এর  সাথে যোগাযোগ করার দায়িত্বটাও বিসিবির ছিল। বিসিবি একেবারে পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ সেই দায়িত্ব পালনে। 

এতো গেলো ডিআরএসের ব্যাপার, বিপিএলের জন্য ভালো মানের ধারাভাষ্যকার ও আম্পায়ার আনতেও ব্যর্থ বিসিবি। এক্ষেত্রেও তাদের অজুহাত করোনা। করোনাভাইরাসের কারণেই বিদেশ থেকে আম্পায়ার আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় বিসিবি। ভালো মানের আম্পায়ার আনতে না পেরে এখন বিসিবি ভারত কিংবা শ্রীলঙ্কা থেকে কোনো রকমে আম্পায়ার আনার চেষ্টা করছে। যেই লিগে ডিআরএস নেই সেখানে বিশ্বমানের আম্পায়ার থাকা দরকার।  অথচ আমাদের ক্রিকেট বোর্ড যেনো ডিআরএস না থাকার পরে আরও উদাসীন। কোনও রকমে 'কাজ চালানো' গেলেই যেনো হলো তাদের। 

ধারাভাষ্যকার নিয়েও তেমন সুখবর নেই বিসিবির তরফ থেকে। এখানে কিছুটা বুদ্ধি খাটিয়ে বিসিবি জানিয়েছে স্থানীয়দের প্রাধান্য দিতেই বিদেশীদের প্রতি অনাগ্রহ তাদের। বিদেশীদের ব্যাপারে কথা উঠলে সেই একই করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখায় দেশের ক্রিকেটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি। ধারাভাষ্যকারও যে হাই-প্রোফাইলের আসবে না সেটাও বিসিবি ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছে। বিসিবির ভাষ্যমতে, বিদেশী ধারাভাষ্যকার যারা আসবে তারা মাঝারি মানের। অর্থাৎ, এখানেও কোনো রকম 'জোড়াতালি' দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে বিসিবি। 

বিসিবির সতর্কতার অভাবে বিপিএল শুরুর আগেই দুঃসংবাদ পাওয়া গেলো। গতকাল জানা গিয়েছে প্রায় ৩-৫ ক্রিকেটার ইতিমধ্যেই করোনাক্রান্ত। সেই সংখ্যা আরও বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিপিএল শুরুর আগে এমন খবর নিশ্চয়ই সুখকর কিছু নয়। বিপিএলে অংশ নেয়া ছয় দল অনুশীলন করে একই মাঠে, ফলে খেলোয়াড় সমাগম যেমন বেশি হচ্ছে তেমনি ক্রিকেটারদের মাঝে চাইলেও দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া অংশ নিতে আসা বিদেশী ক্রিকেটারদেরও রাখা হয়নি কোয়ারেন্টাইনে। দেখা গিয়েছে যে, বাংলাদেশে সকালে পা দিয়ে বিকেলেই দলের সাথে যোগ দিয়ে দিচ্ছে বিদেশী ক্রিকেটার, কোচিং প্যানেল। ফলে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সব মিলিয়ে, বিপিএলের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে এই আসর যেনো শেষ করতে পারলেই বাঁচে বিসিবি। হয়তো এক সময় সেটিও শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এত বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ আয়োজন করে যদি দুই-তিনজন নতুন ক্রিকেটার বাংলাদেশ না পায় তাহলে এই আয়োজন দেশের ক্রিকেটের উন্নতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭