ইনসাইড বাংলাদেশ

রাজনৈতিক দলগুলো কেন লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেয়?


প্রকাশ: 19/01/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে লবিস্ট ফার্ম নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল জাতীয় সংসদে এবং পরবর্তীতে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন যে বিএনপি তিন বছরে লবিস্ট ফার্মের পেছনে প্রায় ৩২ কোটি টাকা খরচ করেছে এবং তিনি এই সংক্রান্ত লবিস্ট ফার্মগুলোর নামের তালিকাও প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সংবাদ সম্মেলনের আগেও তিনি সংসদে বিএনপি যে লবিস্ট ফার্মের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন, তার বৃত্তান্ত বলেন। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠাবে বলে উল্লেখ করেন। একইসাথে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এই টাকা বৈধভাবে খরচ করা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন। এই বক্তব্যের পরপরই দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি জাতীয় দৈনিক দাবি করেছে যে ২০১৪ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার লবিস্ট নিয়োগ রেখেছে এবং লবিস্ট ফার্ম দিয়ে কাজ করছে। ওই প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিআর নামে একটি লবিস্ট ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে আরও একটি লবিস্ট ফার্মকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এটাও দাবি করা হয়েছে যে ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী লীগ এলকার্ড এন্ড ফে নামে লবিং ফার্মকে ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছে এবং এই ফার্মটি আনুষ্ঠানিকভাবে লবি করেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগের লবিস্ট ফার্ম নিয়ে যে বিতর্ক, এটির আসল উদ্দেশ্য কী? কেন লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়? পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে বাংলাদেশের জন্য একটি লবিস্ট ফার্ম কাজ করে। 

অনেকেই মনে করছেন যে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগটি বোধহয় একটি অবৈধ এবং অনৈতিক তৎপরতা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি, প্রশাসনের পরিকাঠামো এবং সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে প্রক্রিয়া, সে প্রক্রিয়াগুলো যদি কেউ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং পড়াশোনা করে, তাহলে দেখা যাবে যে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ মোটেই কোনো অনৈতিক কাজ নয়। বরং এটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে একটি প্রচলিত ধারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ফার্মগুলোকে বলা হয় পিআর ফার্ম বা জনসংযোগ ফার্ম। যে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আওয়ামী লীগে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে, সেটি আসলে আংশিক সত্য। আওয়ামী লীগ সরকার আসলে জনসংযোগ ফার্ম নিয়োগ করেছিল, যে জনসংযোগ ফার্মের প্রধান কাজ হয় যে মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছে, কংগ্রেসম্যান, সিনেটরদের কাছে বাংলাদেশের কার্যাবলী সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত দেয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটাই নিয়ম। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ধরনের পিআর ফার্ম বা জনসংযোগ ফার্মের প্রয়োজন পড়ে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিষয়ই সরাসরি কংগ্রেসম্যান বা সিনেটরদের কাছে পৌছনো যায় না বা নীতিনির্ধারকদের কাছে যাওয়া যায় না। সেখানে এই ধরনের ফার্মগুলো আইনগত বৈধ এবং তারা বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমেই ঘোষণা দিয়ে এই ধরনের লবিং করে। বাংলাদেশের গার্মেন্টসের কিছু বিষয়, যে বিষয়গুলোর জন্য গার্মেন্টস মালিকরা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের সঠিক তথ্য জানাতে চান এবং তারা তখন সেখানে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। উল্লেখ্য যে, এর আগে ডক্টর মুহম্মদ ইউনূসকেও গার্মেন্টস মালিকরা লবিস্ট ফার্ম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার পর বাংলাদেশে যে গ্রেনেড হামলা ঘটেছে, এটার আসল তথ্য উপাত্ত ইত্যাদি সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল।

আবার বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক জিয়ার বিদেশে অবৈধ অর্থ, তার সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে জানানোর জন্য লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মার্কিন প্রশাসনে তাদের সরকারের নীতি, কৌশল আদর্শ ইত্যাদি বোঝানোর জন্য লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছে। এটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ পন্থা, কিন্তু জিনিসগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যাতে মনে করা হচ্ছে যে লবিস্ট ফার্ম বিষয়টি অবৈধ, অনৈতিকভাবে হয়ত টাকা-পয়সা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এইসব কথা না বলে বরং সঠিক তথ্যটি দেয়া উচিত। এই ধরনের লবিস্ট ফার্ম ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে কোনো রকমের কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করা যায় না। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭