ইনসাইড থট

স্বামীর সঙ্গে শোয়ার বিদ্যাও শেখানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে!


প্রকাশ: 20/01/2022


Thumbnail

হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলেই আমার জাফর ইকবাল স্যারের কথা মনে পড়ে। জাফর ইকবাল স্যারের কারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আলাদা মর্যাদা পেয়েছিল, আলাদা একটা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে একটু ভিন্ন ধরনের এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে এসেছে তারা বিভিন্নভাবে নিজেদেরকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে এখন পর্যন্ত। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এখন এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অনেক ছেলে-মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, অনশন ধর্মঘট করছে শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম ঘটনা ঘটলো? একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের দুর্যোগ কেন নেমে আসলো এ নিয়ে নানা জনের নানা মত, নানা প্রশ্ন। আমিও খোঁজার চেষ্টা করলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কি এমন পরিস্থিতি হলো যে, শিক্ষার্থীরা অনশন ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হলো।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় একটি মহিলা হলের একজন হল প্রভোস্টকে কেন্দ্র করে। হল প্রভোস্টের কিছু কিছু বক্তব্য এখন আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি এবং এই সমস্ত বক্তব্যগুলোর প্রেক্ষিতে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা। অনেকগুলো বক্তব্যই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার মধ্যে একটি বক্তব্য দেখে আমার পিলে চমকে উঠলো। বক্তব্যটা এরকম যে, হলে থাকা মেয়েদেরকে ডাবলিং করতে হয় এবং সেখানে সিট বণ্টনের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব হয়। বাংলাদেশ যেখানে পক্ষপাতিত্বের দেশ তখন সিট বণ্টনে সেখানে পক্ষপাতিত্ব হবে এটাও স্বাভাবিক। ডাবলিংয়ে অনেক মেয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেন। তারা প্রভোস্টের কাছে গিয়ে দাবি জানিয়েছেন যে, এরকমভাবে ডাবলিং তাদেরকে কতকাল করতে হবে কিংবা এরকমভাবে ডাবলিং করাটা থেকে তারা মুক্তি চান। এর জবাবে প্রভোস্ট বলেছেন যে, তোমরা যদি এখনই দুজন এক বিছানায় না শুতে পারো, তাহলে বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কিভাবে শুবে? এই বক্তব্য দেখে আমি স্তম্ভিত! শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা ওই পদত্যাগী প্রভোস্ট কেউই এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেনি। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে, এরকম বক্তব্য তিনি শিক্ষার্থীদেরকে দিয়েছেন।

একজন শিক্ষক কিভাবে এ ধরনের নিম্নমানের, অরুচিকর, কুৎসিত বক্তব্য দিতে পারেন এটা ভেবে আমার গা ঘিনঘিন করে উঠছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। তিনি শিক্ষার্থীদের শেখাবেন কিভাবে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হয়। তাছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে যখন আমরা কথা বলি, নারীর মুক্তি, নারীর স্বাধীনতা নিয়ে যখন আমরা কথা বলি, তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরা আমাদের গর্ব। তাদেরকে আমরা মুক্তচিন্তা শেখাবো, আদর্শবাদী হতে শেখাবো এবং স্বাবলম্বী হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখাবো। অথচ তাকে যদি আমরা শেখাই যে স্বামীর সঙ্গে কিভাবে শুতে হবে এবং সেই শোয়ার অভ্যাস করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাবলিং করতে হবে, তারচেয়ে ভয়াবহ, অরুচিকর শিক্ষা কিছু হতে পারেনা। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানভাণ্ডার, জ্ঞান কেন্দ্রের জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পাঠশালা নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিকৃত রুচির চর্চা কেন্দ্র নয়। কিন্তু কিছু কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিকৃত রুচির চর্চাকেন্দ্র বানাচ্ছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন এ ধরনের মন্তব্য করেন তখন আমাদের ভাবতে অবাক লাগে যে, আমরা কোথায় আছি। আমরা জানি যে, বিশ্ববিদ্যালয় শেখায় উদারতা, বিশ্ববিদ্যালয় শেখায় মুক্তচিন্তা। সেখানে যদি স্বামীর সঙ্গে শোয়ার বিদ্যা শেখানো হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় থাকার দরকার কি আছে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি সম্ভাবনাময় বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন নানারকম সংকট, শিক্ষার মান নিয়ে নানারকম প্রশ্ন, সেই সময় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি ভালো অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য এবং এ ধরনের বক্তব্যের পর ওই শিক্ষককে এখনো দায়মুক্তি দেওয়ার যে চেষ্টা, সেটিকে নিন্দা না জানিয়ে পারা যায়না। আমি জানিনা উপাচার্যের অপরাধ কি বা উপাচার্য কতোটুকু দোষী। কিন্তু এরকম মন-মানসিকতা যদি আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের নারী স্বাধীনতার যে বুলি আমরা এখন আওড়াই, সে বুলি আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে সময় লাগবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭