ইনসাইড পলিটিক্স

আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র


প্রকাশ: 20/01/2022


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসতে আরো দু’বছর বাকি। ইতিমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু দু’বছর আগে থেকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়ার কবর জিয়ারতের সময় গণমাধ্যমকে বলেছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। শুধু অংশগ্রহণ করবেন না, এটি বলেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা বলেছেন যে, এই নির্বাচনকে তারা প্রতিহত করবেন। ২০১৮ সালে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। কাজেই তাদের আবার নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উচ্চারণ করাটা কোনভাবেই নৈতিকতার মানদণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বিএনপি সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবস্থানেই আবার ফিরে এসেছে। এর কারণ কি?

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, বিএনপি মনে করছে যে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকার করতে পারবে না। আর এ কারণেই এখন থেকেই তারা মাঠে নেমেছে। বিএনপি মুখে বলছে যে, তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। কিন্তু বাস্তবতায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি মৃত অধ্যায়। এজন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে এবং একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনদিনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে বলছে যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সামনে রেখে আসলে আগামী নির্বাচনে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাচ্ছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আগামী নির্বাচন করার ব্যাপারে একটি রূপ-পরিকল্পনা বিএনপি গ্রহণ করেছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সাধারণত যে সমস্ত দেশে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, যে সমস্ত দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ আছে এবং যে সমস্ত দেশের সরকার আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় সে সমস্ত ঝঞ্ঝা, বিক্ষুব্ধ, সংঘাতপূর্ণ দেশে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে নির্বাচন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কোনো বিবেচনাতেই এর মধ্যে পড়ে না। কিন্তু খুব সক্রিয়ভাবে এখন সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্যই কাজ করছে। তারা দেশে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবহ তুলছে। আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং গণতন্ত্র হত্যাকারী একটি সরকার হিসবে তুলে ধরার নানা রকম অপপ্রচার। সাম্প্রতিক সময়ে সেই অপপ্রচারের কিছু কিছু জিনিস দৃশ্যমান হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই এমন বক্তব্য প্রচারের জন্য। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, আবার বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ভঙ্গুর এবং মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। আর এই সমস্ত অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন আরও সক্রিয় এবং প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে সেজন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপটা অনেক সহজ হবে।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘেও বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে আগে বিদেশে পরিকল্পিত অপপ্রচার করে বাংলাদেশকে একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ হিসেবে উপস্থাপনের প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। এই চেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বর্তমান সরকারের ওপর অনাস্থা সৃষ্টি। এই অনাস্থা সৃষ্টির বিষয়টিকে যদি শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়, তাহলে জাতিসংঘ আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশকে হস্তক্ষেপ করতেও পারে। ইতিমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে পরামর্শক হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই নির্বাচনে বাংলাদেশে কিভাবে হবে, তা নির্ধারণ করবে আমাদের রাজনৈতিক দল এবং জনগণ। এই নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপ আনার পেছনে অন্যকোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার এবং এখনই খতিয়ে দেখা দরকার বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭