ইনসাইড পলিটিক্স

মুরাদের কি হবে?


প্রকাশ: 20/01/2022


Thumbnail

জাতীয় সংসদে এখন শীতকালীন অধিবেশন চলছে। বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিয়েছেন, এখন রাষ্ট্রপতি ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে আলোচনা চলছে। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলছে এবং যে সমস্ত সংসদ সদস্যরা সংসদ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন, তারা করোনা পরীক্ষা করেই অধিবেশনে যোগদান করছেন। সীমিত আকারে এই সংসদ অধিবেশনে পালাক্রমে সংসদ সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু এই সংসদে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বহুল আলোচিত সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর ডা. মুরাদ হাসান যোগদান করেননি। একটি বিতর্কিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পদত্যাগে বাধ্য হন ডা. মুরাদ হাসান। মুরাদ হাসানের কিছু বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে বার্তা দেন যেন তিনি ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলেন। এর পরপরই মুরাদ হাসান পদত্যাগপত্র দেন। ভুলে ভরা এই পদত্যাগপত্র পরবর্তীতে সংশোধন করে জমা দেওয়া হয়। পদত্যাগের পর মুরাদ হাসান কানাডা চলে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ভুল ভিসায় কানাডা যাওয়ার কারণে তাকে কানাডায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

জানা যায় যে, তিনি যখন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তখন তাকে একটি অফিশিয়াল ভিসা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ভিসায় তিনি সরকারি কাজ ছাড়া কানাডা যেতে পারেন না। এজন্যই কানাডায় ইমিগ্রেশন ডা. মুরাদ হাসানকে ফেরত পাঠান। এখান থেকে মুরাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিল কিন্তু সেখানেও তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে ফেরেন। কিন্তু মুরাদ যেন শান্ত থাকার কোনো মানুষই নন। এই সময় তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তার স্ত্রী নারী নির্যাতনের অভিযোগে ৯৯৯-এ ফোন করে অভিযোগ করেন। এরপর তার অস্ত্রগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জমা নেয়। এখন মুরাদ আপাতত শান্ত আছেন। এদিকে মুরাদের এই পদত্যাগের পরপরই তার নির্বাচনী এলাকা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার জেলা জামালপুর থেকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অব্যাহত দেয়া হয়।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যে দল থেকে নির্বাচিত হবেন সেই দলে যদি তিনি সদস্য না থাকেন বা সেই দলের বিরুদ্ধে যদি ভোট দেন তাহলে তার সদস্যপদ চলে যাবে। সেই বিবেচনায় ডা. মুরাদ হাসানের ভাগ্যে কি হবে, সেটি এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। কারণ, মুরাদ হাসানকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে যে অব্যাহতি দিয়েছে সেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের অব্যাহতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এখন পর্যন্ত অনুমোদিত হয়নি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি যদি এটি অনুমোদন করে তাহলেই একমাত্র মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্যটি বাতিলের প্রশ্ন আসবে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে, মুরাদ হাসানের ব্যাপারে সরকার এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বলা হচ্ছে যে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি উক্ত দল থেকে পদত্যাগ করেন। এখানে আইনের একটি ফাঁক আছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে। তারা বলছেন যে, মুরাদ হাসানকে যদি দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাহলেই তার সদস্যপদ বাতিল হবে কিনা নাকি তিনি পদত্যাগ করলে বাতিল হবে, এ নিয়ে একটি বিতর্ক আছে। এটি এখনও নিরীক্ষাধীন।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তিনি পদত্যাগ করা বা দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া একই বিষয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন যে, মুরাদকে যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন পর্যন্ত অনুমোদিত হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হন। আর অব্যাহতিপ্রাপ্ত না হলে তার সদস্যপদও বাতিল হওয়া সম্ভব না। এখন মুরাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা দেখার অপেক্ষা। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে নিশ্চয়ই এই সুপারিশ আসবে, সেই সুপারিশগুলো তখন তারা বিবেচনা করবেন এবং এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭