ইনসাইড থট

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুনত্ব আনা প্রয়োজন


প্রকাশ: 21/01/2022


Thumbnail

বর্তমানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেভাবে মিথ্যা প্রচারণা চলছে, সেই প্রচারণা মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত আমাদের রাষ্ট্রদূতরা অবশ্যই যথেষ্ট দক্ষ এবং অভিজ্ঞ। বিশেষ করে বিদেশি দূতাবাসগুলোতে যারা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের দায়িত্ব বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখন একটি বিষয়ে চিন্তা করা অত্যন্ত জরুরি। বিষয়টি হচ্ছে, বিশ্বের সব দেশেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পেশাদার রাষ্ট্রদূতের বদলে রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে নিয়োজিত করে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমেরিকান ক্যামেরা কোম্পানি কোডাক্ট এবং জাপানের ফুজি ক্যামেরা কোম্পানির মধ্যে একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধ না হলেও কাছাকাছি পর্যায়ে চলে যায়। তখন সমস্যা নিরসনে ও জাপান-মার্কিন সম্পর্ক সুসংহত রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াল্টার মন্ডেলকে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে দেখা যায়, তাকে নিযুক্ত করে সুফল পেয়েছিল দেশটি। ১৯৭৪ সালের দিকে আমি যখন এফআরসিএস করতে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছিলাম, তখন লক্ষ্য করেছি ব্রিটেন থেকে কোনো নামকরা সাংবাদিক অথবা রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান লোকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানো হতো। কারণ ব্রিটেনের কাছে ব্রিটেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার কারণটি হচ্ছে, যারা পেশাদার কূটনীতিবিদ এবং তাদের যেভাবে ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাতে অনেক সময় বিশেষ করে রাজনৈতিক অনেক বিষয়ে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।

বর্তমানে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য যে ধরণের কাজ করা প্রয়োজন, যেভাবে এটি মোকাবেলা করা প্রয়োজন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার কূটনীতিবিদদের দিয়ে তা মোকাবেলা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা, পেশাদার কূটনীতিবিদদের একটি সীমারেখা আছে, তারা এই সীমারেখা অতিক্রম করে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে যেভাবে মিথ্যা প্রচারণাসহ ষড়যন্ত্রের রোডম্যাপ নিয়ে বিরোধী মহল চলছে, সেটি প্রতিহত করতে হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি শুধুমাত্র পেশাদার কূটনীতিবিদদের দিয়ে হবে না। আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং কমপক্ষে চার-পাঁচটি দেশে কূটনৈতিক দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের জায়গায় যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের নিয়োগ করা প্রয়োজন। নেত্রী পরিষ্কারভাবে যদি তাদেরকে বুঝিয়ে দেন কিভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে, তাহলে আমার মনে হয় এই মুহূর্তে দেশের অনেক উপকার হবে। পাশাপাশি এর দ্বারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও সহায়তা করা হবে। হয়তো আপাতদৃষ্টিতে পেশাদার কূটনীতিবিদরা কিছুটা নাখোশ হতে পারেন। কিন্তু আমাদের কাছে দেশের প্রয়োজন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, তাদের সীমাবদ্ধতাকে যদি ডিঙ্গাতে হয়, তাহলে এটি করা প্রয়োজন। এই কারণেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, তিনি সকলকে চিনেন এবং বিভিন্ন স্তরে চিনেন। সুতরাং অন্তত চার-পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দেশে পরিবর্তন করতে হবে। প্রয়োজনে আরও কয়েকটি দেশে এই মূহুর্তে আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রদূতদের পরিবর্তন করে নতুন আঙ্গিকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা প্রয়োজন। আমার মনে হয়, এটি করতে পারলে আমাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। কেননা, এখন শুধুমাত্র গতানুগতিক কূটনৈতিকদের দিয়ে বিশ্বের কোনো দেশই এইসব পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারে না।

আমরা নতুন কোনো এক্সপেরিমেন্ট করতে যাচ্ছি না। যেটি অনেক দেশ অনেক সময় করেছে, আমরা সেটির দিকেই গুরুত্ব দিতে চাই। আমি মনে করি, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক একইসাথে আমি মনে করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিজ্ঞ। তিনি বহুদিনের প্রধানমন্ত্রী। তিনি অবশ্যই এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলার রোডম্যাপ করেছেন এবং নিশ্চয়ই তিনি সফলও হবেন। আমি ঠিক উপদেশ নয়, এই জিনিসগুলো শুধুমাত্র মনে করিয়ে দিতে চাই এই কারণে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কাজ করছেন, সেই কাজটিকে আরেকটি ভিন্ন আঙ্গিকেও যাতে তিনি বিবেচনা করতে পারেন, তার জন্য। এটি কোনো সাজেশনও নয়, উপদেশও নয়। এটা হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকের এই বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা। এই মূহুর্তে আমি মনে করি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভালো ভালো কাজ করে চলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে শক্তিশালী অবস্থানে আনার পেছনে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই আমাদের সফলতা আসছে। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ অর্থ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কায়দায় যেভাবে নেমেছে, ঠিক তেমনিভাবে মোকাবেলা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন এবং আরও পদক্ষেপ নেবেন। যেহেতু আরও অনেক পদক্ষেপ হয়তো তিনি নেবেন, সেই কারণেই আমি এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। আমি মনে করি, আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমাদের অবশ্যই বিজয়লাভ হবে। এসব ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই শেষ পর্যন্ত সফল হয় না। কারণ, অগণতান্ত্রিক পথে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাওয়া অথবা বিদেশি দেশগুলোকে ভুল বুঝিয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পদক্ষেপকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা পরিশেষে কারো পক্ষেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। সুতরাং আমরা জয়ী হবোই।

দুই বছর পরে আমাদের জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরেই সর্বপ্রকার ষড়যন্ত্র চলছে। এই কারণে নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদেরকেও সবদিক থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে, যেভাবে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন হয়েছে এবং তাতে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা প্রমাণ হয়েছে। তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। অনেক দেশেই বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকে পরিবর্তন চায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো হয়েছে। দেশে বিভিন্ন উন্নতি এবং বিভিন্ন ভালো কাজগুলো রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হয়েছে এবং তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করেছেন। জনগণের বিশ্বাস একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই পারেন দেশকে সঠিক পথে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে। এটি দেশের অধিকাংশ জনগণই বিশ্বাস করেন এবং এটি একদমই নির্ধারিত। পাশাপাশি বিশ্ব ম্যাপেও যেন এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত থাকে, তার জন্যেও নিশ্চয় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। আমরা সকলেই চাই যে, তিনি নিশ্চয়ই সফল হবেন। পাশাপাশি, আমাদের যার যখন যেটা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজনবোধ হবে, আমরা তা বলবো। এটি মনে করে নয়, তার মনে নেই অথবা তিনি জানেন না। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এইসব জিনিসগুলো অবশ্যই জনসম্মুখে আনা প্রয়োজন এবং তাতে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেভাবে জিনিসগুলো বিবেচনা করবেন, জনগণও তেমনিভাবে দেখতে পাবে। তাই, আমি বিশ্বাস করি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত আরও শক্তিশালী করার জন্য রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা নিশ্চয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭