ইনসাইড বাংলাদেশ

সম্পর্কের টানাপড়েনের বার্তা দিয়ে বিদায় নিলেন মিলার


প্রকাশ: 21/01/2022


Thumbnail

মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার আজ বিদায় নিলেন। ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিন বছরের মেয়াদ শেষে তিনি আজ বিদায় নিলেন। সাধারণত কোন রাষ্ট্রদূত বিদায় নেওয়ার আগে কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূত যখন বিদায় নেয় তখন এই সাক্ষাৎ অবধারিত। এর আগেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট যখন বিদায় নিয়েছিলেন তখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে উপহারও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে-মার্কিন সম্পর্ক সেই জায়গায় এখন আর নেই। আর সে কারণেই সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান কেউ মিলারকে সাক্ষাৎ দেননি। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়া এবং নানা রকম বিধিনিষেধের কারণেই সাক্ষাৎ সম্ভব হয়নি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই যুক্তি তেমন একটা টেকে না। কারণ, এই করোনা সংক্রমণের সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অনেকের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও দু'দফা সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী করোনার মধ্যেই। আর একারণেই ওমিক্রনের কারণেই রবার্ট মিলার প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, এই যুক্তিটি খুব একটা ধোপে টেকে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে একটিকেই মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশে-মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়েনের একটি ইঙ্গিত বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মার্কিন সম্পর্কের মধ্যে নানা রকম টানাপড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো, বাংলাদেশের সাত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নানা রকম কথাবার্তার প্রেক্ষিতে দু'দেশের সম্পর্ক এখন আর আগের অবস্থায় নেই। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনো ভালো আছে, কিছু কিছু সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা চলছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাই বলেন না কেন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সুরক্ষা এবং দুর্নীতিবিরোধী নীতির কারণে বাংলাদেশকে একটু চাপে ফেলা হচ্ছে। এই চাপ কতটা মানবাধিকার, গণতন্ত্রের জন্য আর কতটা অন্য স্বার্থসিদ্ধির জন্য সে নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রুষ্ট করেছে। আর সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নানারকম চাপে ফেলার কৌশল নিচ্ছে। আবার অনেকেই মনে করেন যে, জো বাইডেন প্রশাসন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে চান। এজন্যই তিনি বাংলাদেশের দিকে আলাদা নজর দিয়েছেন। তবে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে সরকারবিরোধী ব্যাপক প্রচারণা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য দেয়া হচ্ছে জো বাইডেন প্রশাসনকে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ওসমান ফারুকের ভাই ওসমান সিদ্দিকী এখন বাইডেন প্রশাসনের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি এ ধরনের ঘটনার কলকাঠি নাড়ছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

যে কারণেই হোক সামনের দিনগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করছে এমন গুঞ্জন রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, অন্যান্য প্রভাবশালীদের সাথে কথা বলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে এখন পর্যন্ত সরে আসেনি। এর মধ্যে দিয়েই বিদায় নিলেন রবার্ট মিলার। রবার্ট মিলারের বিদায়ে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না করার মধ্য দিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটা প্রচ্ছন্ন বার্তা দিলো বাংলাদেশ? এখনকার বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশের সাথে নেতিবাচক আচরণ করলে বাংলাদেশও একই রকম আচরণ করার সক্ষমতা রাখে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭