ইনসাইড বাংলাদেশ

ভারতের ভূমিকা নিয়ে রহস্যের ধুম্রজাল


প্রকাশ: 21/01/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের কারণেই পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাদি মুখরোচক ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই চাপ সৃষ্টির মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ যেন কোয়াডে যোগদান করে, বাংলাদেশ যেন চীনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে এবং বাংলাদেশে যেন অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোকেও যেন ব্যবসার সুযোগ দেয়। মোটাদাগে এই লক্ষ্যেই এই চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু গত এক যুগে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বন্ধু রাষ্ট্র হলো ভারত। ভারত শুধু বাংলাদেশের প্রতিবেশী না, দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় গেছে গত এক যুগে। বাংলাদেশের অনেক বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভারতের কথাই শেষ কথা হয়ে যায়। যেমন- ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছিল ভারত। আর সেজন্যই ভারতের অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল।

একই ঘটনা ঘটে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও। সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও ওই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন করেছিল এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করেছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বিএনপি সফল হয়নি ভারতের অবস্থানের কারণে। কারণ, ভারত ওই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই সময় ভারতের অবস্থান ছিলো বাংলাদেশের নির্বাচন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা যা বলবেন সেটি গ্রহণ করা উচিত। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশগুলো এই নির্বাচন নিয়ে আর বিতর্ক করেনি। এখন দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ৭ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‍্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যেন তাদেরকে শান্তিরক্ষা মিশনে না নেয়া হয়। এই ঘটনাগুলো যখন ঘটছে তখন ভারতের ভূমিকা নিয়ে রহস্যের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। যখন এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে তখন সীমান্তে সহিংসতা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে নানা অস্বস্তি এবং টানাপোড়নের কথা শোনা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ওপর যে আন্তর্জাতিক চাপ তার পেছনে ভারতের একটা ভূমিকা রয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হচ্ছে। তবে অস্বীকার করা হোক না হোক, একাধিক কারণে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করেন।

প্রথমত, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে ভারতে এখন আগের চেয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোতে চীনের অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শুধু নয়, রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বলয় বাড়ছে বলে ভারতের কেউ কেউ মনে করেন।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা, মাখামাখি নিয়েও ভারতের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে এবং এটি নিয়ে ভারত এখন খুব খোলামেলাভাবেই কথা বলছে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশে দুর্গাপূজার সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং বিভিন্ন রকম অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে ভারতের মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

আর এই সমস্ত কারণেই ভারত কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘকে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে জো বাইডেন প্রশাসনে ভারতের একটা প্রভাব বলয় সর্বজনবিদিত। সেখানকার নীতিনির্ধারণী একাধিক জায়গায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। জাতিসংঘে এখন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারতীয়রা রয়েছে যারা এই অঞ্চলের নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর বাংলাদেশের ব্যাপারে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের অবস্থান গ্রহণ করেছে তখন ভারত এ ব্যাপারে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যখন জাতিসংঘে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের কথা বলছে তখনও ভারতের অবস্থান নিয়ে রহস্যময় ভূমিকা অনেককেই বিস্মিত করেছে। তাহলে কি ভারত বাংলাদেশের ওপর চাপ দেওয়া হোক এটি চাইছে? ভারত কি চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে আলগা করার জন্যই এই কৌশলে পরোক্ষভাবে অংশীদার? এই প্রশ্নটিই এখন কূটনৈতিক অঙ্গনে নানাভাবে ঘোরাফেরা করছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭