পুলিশের সাহসিকতায় ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আহতরা বেঁচে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে, সেই করোনাভাইরাসের সময় পুলিশ বাহিনী মানুষের ঘরে খাবার পৌছে দিয়েছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে রোগীদের। যখন আত্মীয়-স্বজন লাশ ফেলে চলে গেছে, তখন পুলিশ বাহিনী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাশগুলো দাফন করেছে। তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, যেটা এইভাবে তারা আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করেছে। তাছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও পুলিশ বাহিনী বিশেষ করে নারী সদস্যরা যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছে। সেই জন্য আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ জানাবো যে, বিএনপি সবসময় ধ্বংসাত্মক কাজ করে। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, বৃক্ষ কর্তন, অর্থাৎ গাছ কেটে ফেলা, রাস্তা কেটে ফেলা, নানা ধরনের কাজ তারা করেছে। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। যেভাবে তারা পুলিশের সদস্যকে নির্মমভাবে মেরেছে সেটা সত্যিই ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে তারা দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে তার কোনো সীমা নেই। সেসময় পুলিশবাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা সেটা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ - এই সেবার মাধ্যমে আজকে পুলিশ বাহিনী দ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে। এতে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস বেড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ সর্বক্ষণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাবো। বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্য অর্জনে পুলিশ বাহিনী যথাযথ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করতে হবে। আমার বিশ্বাস, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি গণতন্ত্র রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখবেন, জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, যা আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আপনাদের পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতাকে সব আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারে আসার পর দেখি পুলিশের বাজেট মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। আমরা এটাকে ৮০০ কোটি টাকা করে দিলাম। ট্রাস্ট ফান্ড করে ৫ কোটি সিড মানি করি। স্টাফ কলেজ করেছি ট্রেনিংয়ের জন্য। পুলিশের ঝুঁকি ভাতা আমরা প্রবর্তন করি। পুলিশের জন্য দুটি হেলিকপ্টার কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। তার পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাহস ও বিরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের কৃতি সদস্যদের পুলিশ পদক দেন রাজারবাগে ঢাকা মহানগর পুলিশ লাইন্সে এ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।