ইনসাইড টক

‘ভিসি থাকাকালীন ১৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলাম, কিন্তু পুলিশ ডাকিনি’


প্রকাশ: 23/01/2022


Thumbnail

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, শাহজালালে যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সেটি তো কারও কাম্য নয়। আমি যেটা খবর নিয়ে শুনেছি ও মিডিয়াতে দেখে বুঝেছি তা হলো ছোট একটি বিষয় দিয়ে ঘটনাটির শুরু। একটি ছাত্রী হলে সমস্যা হয়েছে। প্রভোস্ট তাদের সাথে ওই সময় কথা বলেনি এবং শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে অসদাচরণ করেছে। কিন্তু একজন প্রভোস্ট একটি হলের শুধু প্রাধ্যক্ষই নন, অভিভাবকও বটে। সেটা ছাত্রী হল হোক আর ছাত্র হল হোক। ছাত্রীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রভোস্ট প্রায়শই তাদের সাথে অসদাচরণ করেন।

শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন, শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক, ৩৪ জন ভিসির একযোগে পদত্যাগের হুমকিসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেছেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আমি মনে করি, শিক্ষকতা পেশা অন্যসব পেশার মতো নয়। শিক্ষকতা পেশায় আসতে হলে অনেক জিনিস সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। পাশাপাশি সংবেদনশীল ও সহনশীল হতে হয়। কারণ ছাত্ররা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে, বিভিন্ন পরিবেশ, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসে। ফলে সবার আচার আচরণ এক হবে, তা তো না। সেটা মেনে নিয়েই আমাদেরকে শিক্ষক হতে হবে, প্রাধ্যাক্ষ হতে হবে, ডীন হতে হবে, ভিসি হতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অনেক সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মধ্যে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। 

তিনি বলেন, যারা গতকাল ছাত্র ছিল, তারাই আজকে শিক্ষক হবে, প্রশাসনিক দায়িত্ব পাবে। এটি সাধারণ নিয়ম। কিন্তু কিছুদিন আগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবতী মহিলা শিক্ষক ছাত্রদের চুল কেটে দিচ্ছিল। এটা আমার কাছে একেবারেই শুধু অপ্রত্যাশিত না,  অবাক করা বিষয়ও ছিল। একজন শিক্ষক কেন ছাত্রদের চুল কেটে দিবে? উনি হয়তো ভালোভাবে সর্বোচ্চ বলতে পারতো একটু ভদ্রভাবে চুল কেটে আসো। এটাতো ওই ভদ্রমহিলাকে কেউ শিখিয়ে দেবে না। এটাতো ওনার নিজেরই জানার কথা। ছাত্ররা তো বাচ্চা না, ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এখন সিলেটে যেটা হয়েছে আমি মনে করি, শুরুতেই এটি শেষ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। অভিযোগের আঙ্গুল প্রাধ্যক্ষ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা দরকার ছিল। ছাত্রদের অভিযোগ আমলে নিয়ে সেটি তদন্ত করে যেভাবেই হোক, এটি সুরাহা করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি মনে করি পরবর্তীকালে পুলিশের অতিমাত্রায় উৎসাহী হওয়া ও তাদের হস্তক্ষেপ জিনিসটাকে ঘোলাটে করেছে। 

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের ছাত্ররা অসন্তোষ হতে পারে। তারা ভিসির বাসভবন ঘেরাও করতে পারে। আমাদের দেশে এটা অতীতেও ঘটেছে। এমনকি আমি নিজেও ভিসি থাকাকালীন একবার ১৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলাম। কই, আমি তো পুলিশ ডাকিনি। আমার ৪৯ বছর শিক্ষকতা চলছে। আমি জীবনে এগুলো অনেক দেখেছি। কিন্তু সিলেটে যা হলো, পুলিশ জল কামান, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার, শটগান ব্যবহার করেছে। এগুলো কেন ব্যবহার করতে হবে? শিক্ষার্থীরা কি বাইরের কেউ ছিল? পুলিশের এ আচরণ একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। যদিও উপাচার্য বলেছে উনি পুলিশ ডাকেননি। তাহলে পুলিশ ডাকলো কে? পুলিশের এ ধরণের আচরণের জন্য আমি বলবো পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে।

আবদুল মান্নান বলেন, এখন প্রাধ্যক্ষ বা প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন। ছাত্ররা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে অনশন করছে। কিন্তু আমি মনে করি, উপাচার্যের পদত্যাগ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এর আগেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও হয়েছে। ভিসির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই উপাচার্য বিরোধী প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশ হয়েছে। এমনকি আট-দশজন উপাচার্য বিভিন্ন সময় পদত্যাগও করেছেন। কিন্তু তাতে কি ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সমাধান হয়েছে? আজকে একজন পদত্যাগ করলে কালকে আরেকজন আসবে। উনি কি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবেন এসব হবে না। আমি মনে করি আমাদের আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করা উচিত। অন্যথায় এ ধরণের আন্দোলনে তৃতীয়পক্ষ ঢুকে যেতে পারে।   

শিক্ষামন্ত্রীর সাথে শিক্ষার্থীদের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন শিক্ষামন্ত্রী যখন ছাত্রদের সাথে বৈঠকে বসতে চায়, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে, তখন আমার মনে হয় সৌজন্যতাবোধ থেকে হলেও শিক্ষার্থীদের তার কথা শুনা ও তার সাথে সমস্যা নিয়ে কথা উচিত। 

৩৪ জন ভিসির একযুগে পদত্যাগের হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি খবরে দেখেছি ৩৪জন ভিসি একযুগে পদত্যাগের কথা বলেছেন। আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের ঘটনা ঘটবেই। ভারতে এধরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি আমার জানা মতে ঘটেনি। যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই সহজ ও শ্রেয়। যদি যুদ্ধের ময়দানে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যায়, এখানে যাবে না কেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭