ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের হাতে বন্দি খালেদা


প্রকাশ: 23/01/2022


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়া এখন অনেকটাই সুস্থ। তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে আনা হয়েছে আরো এক সপ্তাহ আগে। এখন তিনি বাসায় যাওয়ার মত সুস্থ, চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াও আর হাসপাতালে থাকতে চান না। তিনি তাঁর বাড়ি ফিরোজায় যেতে চান। কিন্তু তারেক জিয়ার নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালেই রাখা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে থাকার মত অসুস্থ নন, এটি বলছেন এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকগণ। কিন্তু তারপরও তাকে কেন হাসপাতালে রাখা হচ্ছে এ নিয়ে বিএনপির মধ্যেই নানারকম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, তারেক জিয়া মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া যদি হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যান তাহলে বিএনপির এতদিনের আন্দোলন বিফলে চলে যাবে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হবে যে, সরকার যে বক্তব্যগুলো দিয়েছিল তাই সঠিক। বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে বিএনপি নেতারা যে সমস্ত শঙ্কা প্রকাশ করেছিল তা সবই ভুল এবং এটি ছিলো বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার একটি কৌশল মাত্র। আর এ কারণেই তারেক জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালেই থাকবে। কাজেই, গতকালই যখন বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে আজ তা পাল্টে গেছে। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এক ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন।

উল্লেখ্য যে, গত ১৩ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল ভর্তি হন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে যে, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তবে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের লিভার সিরোসিস, যেটি চিকিৎসা নিলে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব এবং আস্তে আস্তে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এ অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার রক্তক্ষরণ হলে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। এরপর বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের নেতারা বেগম জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, যেকোনো মুহূর্তে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। এজন্য তারা দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার দাবি করেন। তারা এটাও বলেন যে, বেগম খালেদা জিয়া যে রোগে আক্রান্ত তার উন্নত চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। কিন্তু এর পরপরই অন্যান্য চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। এমনকি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাকে বিএসএমএমইউ’তে সব ধরণের চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

এসবের মধ্যেই বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন আস্তে আস্তে বেগবান হতে থাকে। বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ একাধিক নেতা প্রায় কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তারা জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন। এর মধ্যেই চিকিৎসকরা খবর দেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা অনেকটাই উন্নত হয়েছে, তাকে এখন কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়েও বিএনপির সঙ্গে এক ধরনের দ্বন্দ্ব হয় এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে কেবিনে নেয়া হয়।

এখন বেগম জিয়া নিজেই কেবিন থেকে বাড়িতে যেতে চাইলেও তারেক জিয়ার আপত্তির কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তারেক জিয়া মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িতে নিলেই আন্দোলনের বারোটা বাজবে। বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের বলি বানানো হচ্ছে এবং সে কারণেই জোর করে তাকে হাসপাতালে রাখা হচ্ছে। বিএনপির অনেক নেতাই এখন বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার হাতেই বন্দী। কারণ, তারেক জিয়ার ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে বেগম খালেদা জিয়া কিছুই করতে পারছেন না। এমনকি বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাকে তারেক জিয়ার অনুমতি নিতে হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭