ইনসাইড গ্রাউন্ড

বাংলাদেশ দল যেনো নতুন কোচদের জন্য 'ইন্টার্নশিপের জায়গা'


প্রকাশ: 24/01/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের ফুটবলে মান সম্পন্ন কোচের অভাব দীর্ঘদিনের। অতি অল্প সময়ের মধ্যে নতুন বিদেশী কোচ আনা হলেও অভিজ্ঞ এবং মান সম্পন্ন কোচ বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে গত এক দশকে দেখা যায়নি। গত এক দশকে বিদেশী কোচদের তালিকা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, একমাত্র টস সেইন্টফিট ব্যতীত আরও কারোই জাতীয় দলে কোচিং করানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। নতুন, অনভিজ্ঞ কোচদের সুযোগ দিয়ে বাফুফে যেনো নতুন কোচদের ইন্টার্নশিপের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত এক দশকে এত বেশী বিদেশী কোচ জাতীয় দলের দায়িত্ব নিলেও কেউই দলকে বড় সাফল্য এনে দিতে পারেনি। 

সর্বশেষ যোগ দেয়া নতুন কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরার কোচিং ক্যারিয়ারও সমৃদ্ধ নয়। এর আগে কোনো জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে তো তিনি ছিলেনই না এমনকি কোনো ক্লাবের হেড কোচ হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই তার। অথচ এমন একজন কোচের হাতে জামাল-তপুদের দায়িত্ব দেয়া হলো। ঠিক কি কারণে বাফুফের মনে হলো যে, এই কোচের হাত ধরে বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে যাবে সেটি বাফুফের কর্তারাই ভালো জানেন। 

নতুন কোচ নিয়োগের পেছনে বাফুফে বস কাজী সালাউদ্দিন সে সময় বলেছিলেন, "মনে হচ্ছে তিনি অ্যাকটিভ, পুরো ব্যাপারটা সামনে জানা যাবে, কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে ওনার সাথে বাংলাদেশ দল সাফল্য লাভ করবে।"

বাফুফের দায়িত্বশীল কেউই নতুন এই কোচের নিয়োগের পেছনে 'মনে হচ্ছে'র বাইরে তেমন কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ বলেননি ।

এর আগেও বাংলাদেশে এমন কোচ এসেছেন যাদের এর আগে জাতীয় দলের কোনও দলের দায়িত্ব ছিল না।

বাংলাদেশ ভালো মানের কোচ আনতে না পারার ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতার পেছনের অন্যতম মূল কারণ বাফুফের যথাযথ লিয়াঁজোর অভাব।

বাংলাদেশের একজন বর্তমান ফুটবলার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "বাংলাদেশে যথাযথ এজেন্টের সাথে যোগাযোগ কিংবা দেশেও ফুটবলে এজেন্ট কালচারটা তেমন শক্তিশালী না। অন্যান্য দেশে এসব নিয়ে ফুটবলাররা মাথা ঘামান না, তাদের কাজ খেলা।"

নেদারল্যান্ডসের কোচ লোডউইক ডি ক্রুইফ বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার আগে ও পরে তেমন কোথাওই কোচ হিসেবে কাজ করেননি। ইতালিয়ান কোচ ফ্যাবিও লোপেজ ২০১৫ সালে দায়িত্ব নেন, তিনিও কখনো কোনও জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেননি।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়া স্প্যানিশ গঞ্জালো মোরেনো বাংলাদেশ ছাড়া কোনও দেশ তো বটেই কোনও ক্লাবেও কোচিং করাননি, শুধুমাত্র বার্সেলোনার বি-টিমে একসময় খেলতেন এতেই বাফুফে তাকে কোচ করে নিয়ে আসেন। তবে তিনি বার্সেলোনার অ্যাকাডেমিতে কাজ করছেন এখন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব নেন ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ওর্ড, তিনিও কখনো বাংলাদেশ ছাড়া কোনও জাতীয় দলের কোচিং করাননি, তিনি চুক্তির মেয়াদ দুই মাস বাকি থাকতেই পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন এবং থাইল্যান্ডের এয়ার ফোর্স ইউনাইটেডের কোচের দায়িত্ব নেন।

বাংলাদেশে তিন বছর কোচের দায়িত্ব পালন করা ইংলিশ কোচ জেমি ডে বাংলাদেশে আসার আগে বেশ কয়েকটি ক্লাবে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন।

জেমি ডে'র বিদায়ের পর বাংলাদেশেরই ক্লাব ফুটবলের সফল দুই বিদেশি কোচ মারিও লেমোস ও অস্কার ব্রুজনকে টুর্নামেন্ট ভিত্তিক কোচের দায়িত্ব দিয়ে কাজ করান। এর মধ্যে অস্কার ব্রুজন নিজ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার নিয়ে দল গড়েই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলান বাংলাদেশকে। এখন এলেন হাভিয়ের ক্যাবরেরো।


বাংলাদেশে যেসব কোচ গত দশ বছরের মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যে টম সেইন্টফিট সবচেয়ে সফল। তিনি বাংলাদেশে আসার আগেও বেশ কয়েকটি জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বর্তমানে তার দল গাম্বিয়া জাতীয় দল আফ্রিকান নেশনস কাপে ভালো খেলছে।

বিশ্লেষকরা বা ফুটবল লিখিয়েরা অনেক সময়ই বলে থাকেন, নতুন বিদেশি কোচরা অনেক সময় বাংলাদেশকে বেছে নেন 'পোর্টফোলিও ভারি করতে'। দেশীয় ফুটবল বিশ্লেষকদের সেই ধারণা যে ভুল নয় সেটির প্রমাণ পাওয়া যায় গত এক দশকে কোচদের ইতিহাস যাচাই করলেই। এভাবে বছরের পর বছর যদি নতুন, অনভিজ্ঞ কোচ দিয়েই জাতীয় দল পরিচালনা করা হয় তাহলে ফুটবলাররা সেই কোচ থেকে কতটুকু শিখতে পারবে সেই প্রশ্নও থেকে যায়। তাছাড়া, বাফুফে কোনো কোচের সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও করে না। ফলে  দ্রুত বার বার কোচ পরিবর্তনের ফলে নতুন কোচ আসলে তার প্লেয়িং স্টাইলের সাথে খেলোয়াড়েরা মানিয়ে নিতে নিতে দেখা যায় যে ঐ কোচের বিদায়ী ঘন্টা বেজে যায়। কোচের অর্থ প্রাপ্তি এবং বাফুফের অর্থ খরচ হলেও আক্ষরিক অর্থে দিন শেষে খেলোয়াড়দের কিছুই শেখা হয় না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭