ইনসাইড পলিটিক্স

ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কি আন্দোলনে যাবে?


প্রকাশ: 24/01/2022


Thumbnail

নতুন নির্বাচন কমিশন ও আইন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে গতকাল রোববার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তবে ‘তড়িঘড়ি’ করে এই আইন কেনো করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন ওঠছে বিরোধী মহল থেকে। পাশাপাশি এই আইনের অধীনে রাষ্ট্রপতি শেষ পর্যন্ত কাকে মনোনীত করবেন ও নিয়োগ দিবেন এ নিয়েও আলাপ-আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষরা মনে করছেন, নতুন ইসি গঠিত হলে রাজনীতির মাঠ গরম করতে চাইবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। শুধু বিএনপিই নয়, অন্যান্য বাম-ডান ও ইসলামী দলগুলোও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনীতির মাঠের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। সংবিধান অনুযায়ী, এ অল্প সময়ের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তাই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা হিসাব নিকাশ, চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। বিশেষ করে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রথমে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের সময় নেই বললেও সব দলগুলোর দাবি ও সুশীল সমাজের চাওয়ার প্রেক্ষিতে গতকাল নির্বাচন কমিশন আইনের খসড়া জাতীয় সংসদে উত্থাপন ও বিল পাস করে দলটি। কিন্তু বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ এ আইন নিয়ে সংসদেই আপত্তি তোলে। সাংসদ হারুন ও তার দল শুরু থেকেই বলে আসছে যে, তারা এই আইনে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত করা হবে, তা মানবেন না। নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে ‘তামাশা’ বলেও অভিহিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন৷ 

অবশ্য বিএনপি প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে নেতিবাচক কথা-বার্তা বলে আসছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির আহ্বান উপেক্ষা করে সংলাপে বসতেও অপারগতা প্রকাশ করে দলটি। পাশাপাশি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। যদিও করোনা প্রকোপের কারণে এখন দলটি সভা-সমাবেশ বন্ধ রেখেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে দলটি তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ‘সর্বদলীয় বিরোধী জোট’ নামে একটি প্ল্যাটফরম বা এর কাছাকাছি একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করে বাম-ডানসহ বিরোধী দলগুলোর সাথে একতাবদ্ধ হয়ে ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ কিংবা ‘যুগপৎ’ যেকোনো প্রক্রিয়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় দলটি। তবে বামদলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোতে জামায়াতকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই কয়েকটি দল বিএনপির সাথে এক্ষুনি একজোট না হয়ে দলটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। ফলে অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সাথে জোটবদ্ধ আন্দোলন করতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই জামায়াতকে মাইনাস করেই আন্দোলনের কথা চিন্তা করতে হবে। 

শুধু বিএনপিই নয়, ইসি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অন্যান্য বাম ও ইসলামী দলগুলোও মাঠের আন্দোলনে নামতে চাচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনী জোট ঐক্যফ্রন্টে যুক্তথাকা একাধিক দলও রাজপথে আন্দোলনের কথা ভাবছে। ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের দুইটি সংগঠন জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্য বলেছে যে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে এই নির্বাচন কমিশন গঠন হলে সরকারের আজ্ঞাবহ এবং অনুগত ব্যক্তিরাই নির্বাচন কমিশনে আসবে। এতে এটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় হবে। এ কারণে তারা রাষ্ট্রপতির সংলাপেও যায়নি। এছাড়া বিএনপির ২০ দলভুক্ত দল এলডিপিও রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে। 

অন্যদিকে  বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও বাম এ জোটটি ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে। এদের পাশাপাশি জোনায়েদ সাকির গণসংহতি কিংবা সিপিবিও রাষ্ট্রপতি সংলাপ বর্জন করেছে। ফলে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে বামদলগুলো আন্দোলনে নামলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো ইসলামী দলগুলোও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে একজোট হচ্ছে। ফলে একটি তৃমুখী আন্দোলনের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে এবং উগ্র এ দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে বলেই মত বিশ্লেষকদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে একাট্টা হয়ে রাজপথে নামবে। এখন আলাদা আলাদা ফোরামে কথাবার্তা চালালেও সামনের দিনগুলোতে আন্দোলন করতে চাইবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন আইন নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে গেছে। দিন যত যাবে, এ পরিস্থিতি আরও বাড়বে এবং একটা সময় চূড়ান্ত লক্ষ্যে সবগুলো দলই রাজপথে নামবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমতাবস্থায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে যে আন্দোলন হবে সেই আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হবে বা কতটা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করতে পারবে, নাকি শেষ পর্যন্ত বিএনপির ‘ঈদের পরের আন্দোলনের’ মতো হয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭