জনপ্রতিনিধি বড় না আমলা বড়, এ প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরেই সমাজে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরে আমলাদের দৌরাত্ম্যে অনেক বাঘা বাঘা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে প্রশ্ন-ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় সরকারের একজন জনপ্রতিনিধিকে গ্রেফতার করা হয় গত শুক্রবার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সাথে জড়িত। উল্টোদিকে সরকারি এক আমলার (ইউএনও) বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তিস্বরূপ তাকে গ্রেফতার নয়, একধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়ার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ দু’টি ঘটনার মধ্যেই আমলা বড় না জনপ্রতিনিধি বড় প্রশ্নে উত্তর আছে বলে সচেতন মহলের অনেকেই মনে করছেন।
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া মাহবুবা নাসরিন নামে ওই জনপ্রতিনিধি যা করেছেন, তা আইন অনুযায়ী একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ দুর্নীতির জন্য তার শাস্তি হয়েছে। জেল হয়েছে এবং শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোতে প্রথম পাতায় বড় ব্যানার হেডিং করে তার দুর্নীতির খবর ছাপা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকুরীজীবী বিশেষ করে আমলাদের দুর্নীতির ক্ষেত্রে এ ধরণের একটিও নজির নেই। তাদের গ্রেফতার হওয়া তো দূরের ব্যাপার, অধিকাংশ সময় জবাবদিহিতাও করতে হয় না তাদের। গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রহমানের দুর্নীতির ক্ষেত্রে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে।
শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে গ্রেফতার হতে হয়নি। জেলের ভাত খাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। অথচ তিনি ভূমিহীনদের জন্য সরকারের নেওয়া গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে ৪৩ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। মাটির কাজ না হওয়া সত্ত্বেও ঘরের জন্য বরাদ্দ করা টাকা উত্তোলন করেছেন। অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন না করে নগদ টাকা তুলেছেন। বদলিজনিত কারণে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে কাজ চালিয়ে গেছেন। এমনকি ওই ইউএনও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রকল্প কমিটি গঠন করেননি। তিনি প্রকল্পের পুরো কাজই করেছেন একক দায়িত্বে।
শফিকুর রহমানের কাজটিও একটি ফৌজদারি অপরাধ, কেননা তিনি দুর্নীতি করেছেন। দুর্নীতি দমন আইনের ৫ এর ২ ধারা অনুযায়ী এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার এ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৭ বছরের জেল। কিন্তু তাকে এসব শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। টাকা আত্মসাৎ এর দায়ে বর্তমানে ষষ্ঠ গ্রেডে থাকা এই কর্মকর্তাকে সপ্তম গ্রেডে নামিয়ে দেওয়ার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আমলার এই নামকাওয়াস্তে শাস্তি আইনঅজ্ঞদের পাশাপাশি সমাজের অনেককেই রীতিমতো অবাক করেছে। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশে আমলাদের যদি এইভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে পরে একটা সময় দেশটাই আমলাতন্ত্রের দুর্নীতির গোলক ধাঁধায় আটাকে যাবে, যা থেকে উৎরানো কঠিন হয়ে যাবে। দুর্নীতির দায়ে যদি জনপ্রতিনিধির গ্রেফতার হতে হয়, তাহলে পরে আমলাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।