ইনসাইড এডুকেশন

ভিসির পদত্যাগ: শিক্ষার্থীদের দাবি নাকি গোষ্ঠীর স্বার্থ?


প্রকাশ: 24/01/2022


Thumbnail

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করা ২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ষষ্ঠদিনের অনশনে রয়েছেন ১২ জন শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বর্তমান চিত্র এটি।

আন্দোলনের শুরু থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, প্রথম যখন প্রভোস্ট পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করা হয় তখন সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সমর্থন ছিলো। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনে আশ্বাস দিলেও কতিপয় শিক্ষার্থী সেই আশ্বাস না মেনে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি (রোববার) বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

এই ঘটনায় উপাচার্যের ভূমিকা অবশ্যই ন্যক্কারজনক এবং উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। একজন উপাচার্য কীভাবে তাঁর সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ দিয়ে হামলা করে সেটি নিয়ে নিন্দা জানিয়েছে সারাদেশের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। এই হামলার প্রতিবাদ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদও জানিয়ে মানববন্ধনও করা হয়। ওই দিন রাতেই পদত্যাগ করেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট। প্রভোস্টের পদত্যাগের পর আন্দোলনের ইতি সেখানেই হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এরপর প্রভোস্ট পদত্যাগের আন্দোলন উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। টানা তিনদিন ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ২৩ জন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে ২৩ জন শিক্ষার্থী। তখন সেটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীর আন্দোলনে রূপ নেয়। এরফলে আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে।

শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে হঠাৎ কেন আন্দোলন? এই আন্দোলনে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী রয়েছে নাকি মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থী প্রভোস্ট পদত্যাগের আন্দোলনকে প্রবাহিত করে অন্যদিকে নিয়ে গেছে? শাবিপ্রবির আন্দোলনের এই সারমর্ম থেকে এটি স্পষ্ট যে, এই আন্দোলনে এখন আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন অংশগ্রহণ নেই। ২৩ জন শিক্ষার্থী এখন এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত। পরে অবশ্য আরও ৫ জন শিক্ষার্থী যোগ দেন বলে জানা যায়। প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অপসারণে কেবলমাত্র ২৩ জন শিক্ষার্থীর দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্কট নিরসনে সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকেই তাদের সঙ্গে বসতে চাইলে তারা সেটিকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে আলাপ করে ঢাকায় গিয়ে দেখা করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শিক্ষামন্ত্রীকে ক্যাম্পাসে এসে না হলে ভার্চুয়ালই আলোচনার প্রস্তাব দেয় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে মধ্যরাতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ঘণ্টা ব্যাপী ভার্চুয়াল আলোচনা চলে। আলোচনা শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে তাদের দাবি ও লিখিত আকারে উপস্থাপন করার কথা বললেও এতে সাড়া দেননি শিক্ষার্থীরা। মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ এই আন্দোলনকে এখন প্রশ্নবিদ্ধ করছে বটে। কেননা, শিক্ষার্থীরা সমাধানের পথে না যেয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী সাদিয়া এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর পেছনে আছেন মো. রুহুল আমিন ডিআইপি। রুহুল আমিন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাদিয়াকে এই আন্দোলন বেগবান রাখার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে এই আন্দোলনের জন্য ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬৪৪ টাকার একটি ফান্ড গঠিত হয়েছে বলে জানা যায়। সেই তহবিল সংগ্রহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন- অর্থনীতি বিভাগের মীর রানা, মাজহারুল হক পিতুল, জোবায়ের আহমেদ, শুভময় শুভ, নাদের চৌধুরী, খন্দকার শিহাব উদ্দিন শিহাব, রিশাত প্রতীক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আদনান রহমান এবং সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের সৌরভ সংলাপ চাকমা।


এদিকে আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘অনশন কর্মসূচি থেকে আমাদের সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। একশত ঘণ্টার ওপরে আমাদের সহযোদ্ধারা না খেয়ে আছেন। একজন মানুষের জীবনের চেয়ে ভিসি পদটাই বড়। প্রয়োজনে মরবো, তারপরও অনশন ভাঙবো না। অনশন ভেঙে কারও সঙ্গে আলোচনায় বসবো না।’

মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীদের এই ধরণের বক্তব্য থেকে এই আন্দোলনের পেছনে একটি ভিন্ন অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করেছেন অনেকে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা কেন আলোচনায় বসতে চান না সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা কেন এতটা আক্রমণাত্মক আচরণ করছেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ প্রথম মেয়াদের পর দ্বিতীয় মেয়াদেও বেশ ভালোভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে করেন অনেকে। ইতোমধ্যে উপাচার্য জাবি মেয়েদের নিয়ে করা বক্তব্যের জন্য ক্ষমাও প্রার্থনা করেছেন। তবুও হঠাৎ করে কেন মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীদের এমন আক্রমণাত্মক ভূমিকা, এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। উপাচার্যের পদত্যাগই একমাত্র সমাধান নয় দাবি করে বিশ্লেষকরা বলেন, শিক্ষার্থীরা কেন আলোচনা করে সমাধানের পথে আসতে চাইছে না এটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

এই আন্দোলন সফল হলে অন্যান্য ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে একই পন্থা অবলম্বন করা হবে এবং সেই অভিসন্ধি থেকেই মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীরা সমাধানের পথে আসতে চায় না বলে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা যায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭