ইনসাইড বাংলাদেশ

ইসি গঠন আইন নিয়ে দ্বিচারিতা করছে সুশীল সমাজ?


প্রকাশ: 25/01/2022


Thumbnail

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন না থাকাকেই প্রধান দুর্বলতা হিসেবে এতদিন চিহ্নিত করে আসছিলো নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজ। সভা-সমাবেশ, টিভি টক শো, সব জায়গায়ই আইন না থাকাতে নিরপেক্ষ ইসি গঠন সম্ভব হচ্ছে না বলে গলা ফাটাতেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। ফলে ইসি গঠনের আগে আইন তৈরি করার নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইতোমধ্যে গত রোববার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। কিন্তু আইন প্রণয়নের পরও সমালোচনা বন্ধ নেই সুশীল প্রতিনিধিদের। এতদিন তারা বলতেন আইন তৈরি করা মাত্র দুই মিনিটের ব্যাপার কিন্তু আইনটি সংসদে তোলার পর এখন সুশীল সমাজ বলছে আইনটি তড়িঘড়ি করে তৈরি করা হয়েছে। সুশীলদের এ ধরণের দ্বিচারি অবস্থানের কারণেই গণতন্ত্র সুসংহত হচ্ছে না বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকেরা।

সন্ত্রাস-ধর্ষণ-মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা-গণতন্ত্র-নারী অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে দেশের সুশীল সমাজকে প্রায়শই সরব হতে দেখা যায়। নিয়মিত বক্তৃতা-বিবৃতির পাশাপাশি অনেক সময় তারা রাজপথে মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমেও জানান প্রতিবাদ। রাজনৈতিক দল এমনকি সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতেও তাদের ভূমিকা আলোচনায় এসেছে নানা সময়ে। কিছুদিন আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য এখনই আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে বিবৃতি দেন দেশের ৫৩ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, আকবর আলি খান, রাশেদা কে চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি রয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, বিগত দুই নির্বাচন কমিশনের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণের কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থায় মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফেরাতে নির্বাচন কমিশন এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এ জন্য সংবিধানের আলোকে ‘আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে’ পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তারা। 

একাধিক রাজনৈতিক দলের চাওয়া ও নাগরিক সমাজের দাবির মুখে শেষমেশ ইসি গঠনের আগে আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার এবং গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়৷ কিন্তু এখন নতুন খুঁত ধরতে সুশীল সমাজ ব্যতিব্যস্ত। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এখন বলছেন যে, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার ক্ষেত্রে আরো সময় নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল৷ এই আইনের খসড়ায় কিছু অপূর্ণতা আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সদিচ্ছা থাকলে ভালো নির্বাচন করতে পারত৷ কিন্তু তাদের পারফর্মেন্স সন্তোষজনক নয়৷ সরকারের পক্ষে সুন্দর একটা আইন করার সুযোগ ছিল৷ কিন্তু তারা সেটা না করে তড়িঘড়ি করে আইনটি করতে যাচ্ছে৷ এতে তো সমস্যার সমাধান হবে না৷

অথচ সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধিরাই দুই দিন আগে বলেছেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশন আইনের কথা বলা আছে। কিন্তু গত ৫০ বছরেও সেই আইন হয়নি। আইন হলে সেখানে কারা নির্বাচন কমিশনের সদস্য হতে পারবেন, কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন  তাদের যোগ্যতা, সততা, গ্রহণযোগ্যতা এসব বিষয়ে স্পষ্ট আইন থাকবে। তাদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে নাগরিকদের জানানো হবে। সে ব্যাপারে নাগরিকেরা কথা বলতে পারবেন। আবার তাদের ক্ষমতা এবং এখতিয়ার নিয়ে আইনে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। কিন্তু দাবি-দাওয়া উল্টে এখন তারা সার্চ কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেষ্টা করছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭