লিভিং ইনসাইড

অসচেতনতায় ভয়াবহ হতে পারে ওমিক্রন!


প্রকাশ: 26/01/2022


Thumbnail

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন-ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ছোবলে সারা বিশ্বে নাভিশ্বাস উঠেছে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রকোপ এখন পুরো বিশ্বে। ওমিক্রন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম বিপদজনক হলেও এবং মৃত্যুর হার অনেক কম হলেও এটি মিউট্যান্ট ভাইরাস বলে যেকোনো সময় বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এটি করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে দ্রুত ছড়ায়। আর দ্রুত ছড়াতে থাকলে সেটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরির দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে নানা নির্দেশনা, বিধি-নিষেধ। এখনো চালু রয়েছে নো মাস্ক নো সার্ভিস। এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে দিন দিন আক্রান্ত হলেও কেউ মানছে না সতর্কতা, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। জনসাধারণের এই সচেতনতা না মানার ফলে অজান্তেই  ঝুঁকির মুখে পড়ছে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারি এবং সামাজিক জীবনে।

ব্যক্তিগত জীবন: ওমিক্রন নিয়ে অনেকেই  ভয় পাচ্ছেন না। কারণ একটি কথা এর মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেছে, ওমিক্রনে বিরাট কিছু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে না। সাধারণ জ্বর, ঠান্ডা, কাশির মতই। কারণ ওমিক্রন ফুসফুসে সংক্রমিত হচ্ছে না। কিন্তু উপসর্গ বুঝার উপায় না থাকলেও এর প্রভাব তো রয়েছেই। করোনায় আক্রান্ত হলে ব্যক্তি জীবনে আপনার কর্মক্ষেত্রে সমস্যা হবে। আপনার পরিবারের মানুষজন আতঙ্কে থাকবে। আপনার সকল ধরনের বাইরের কাজে বাঁধাগ্রস্ত হবেন। ব্যাক্তি জীবনের কাজকর্ম স্বাভাবিক নিয়মে করতে পারবেন না। 
 
এছাড়াও  একবার কোভিড সংক্রমণ হলে তার প্রভাব পড়বে মস্তিষ্কে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন সাইটোকাইন নামক ফ্লুইডের ভূমিকার কথা। শরীর এই উপাদানটি নিজেই তৈরি করে রোগটির সঙ্গে লড়াই করার জন্য। এটির প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। ঠিক যেভাবে কেমোথেরাপি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে, সেভাবেই সাইটোকাইন কভিডের সঙ্গে লড়ে। এবং কেমোথেরাপির রাসায়নিকের মতোই এটিও মস্তিষ্কের কোষের গড়নে বদল ঘটায়। এই ছাপ সারা জীবন থেকে যায়।

পারিবারিক জীবন: অসচেতনতার ফলে আপনি যদি কোনভাবে করোনায় আক্রান্ত হন তাহলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে আপনার পরিবারের মানুষজন। তারপরেও আবার  আপনি যদি পরিবারের  একমাত্র কর্মক্ষম হন, তাহলে তো পরিবারের জন্য আরো সমস্যার। আপনার কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে গেলে আপনার পরিবারে দেখা দিবে আর্থিক সমস্যা এবং আপনার সন্তানের প্রয়োজনীয় খরচ করতে হিমশিমে পড়ে যাবেন। অন্যদিকে আবার কিছু পরিবারের  ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের হার বেড়ে যাচ্ছে। অন্যের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি হচ্ছে। এর ফলে ধীরে ধীরে পারিবারিক সম্পর্কগুলোর উপর একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

শিক্ষাজীবন: ছাত্র-ছাত্রীরা কভিডে আক্রান্তের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। অনলাইনে কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। অনেক শিশুর মধ্যেই আচরণগত পরিবর্তন হচ্ছে। সঠিক মানসিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা পিছিয়ে যাচ্ছে, সেশন জটের মুখে পড়ছে। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনলাইন ক্লাসের কারণে শিশুদের মোবাইল এবং ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি বাড়ছে। অন্যদিকে  গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীর আবার ভালো কোন ডিভাইস পাচ্ছে না ক্লাস করার জন্য। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

কর্মজীবন: মাত্রাতিরিক্ত করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেলে সরকার লকডাউন দিয়ে দিবে। ফলে মানুষ তার কর্মক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরণের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। কর্মী ছাটাই শুরু হবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠান চালাতে না পেরে বন্ধ হয়ে হয়ে যাবে ব্যবাসা প্রতিষ্ঠান। এর সাথে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এবং তাদের পরিবার এক মারাত্মক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা  সাধারণ মানুষদের এক চরম মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দিতে বাধ্য হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই প্রক্রিয়া শুরু করবে। সকল লেভেলের কর্মীদের ছাটাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। যারা ছাটাইয়ের শিকার হননি তারাও আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পর্যবসিত হল। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় লস হওয়ার কারণে কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি কমিয়ে দিতে বাধ্য হল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে না পেরে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। এর ফলে এর সাথে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এবং তাদের পরিবার এক মারাত্মক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হল। এই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আমাদের মত সাধারণ মানুষদের এক চরম মানসিক চাপের মধ্যে ফেলে দিল। 

সামাজিক জীবন: সমাজ জীবনে ব্যাপক বিস্তার ফেলছে করোনাভাইরাস। কভিডে আক্রান্তের ফলে আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলের বাল্য-বিবাহের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কারন গ্রামাঞ্চলের নিম্নজীবি মানুষের আয়-রোজকার কমে যাওয়ার কারনে পরিবার চালাতেই হিমশিমে পড়ছে, বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে ছোট ছোট মেয়েদের। ফলে বাল্য বিবাহের সংখ্যা বাড়ছে, সাথে সাথে বাড়ছে ডিভোর্সের সংখ্যাও। মানুষের মধ্যে থেকে হাড়িয়ে যাচ্ছে মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ। ফলে জায়গা রে নিচ্ছে অনৈতিকতা, অমানবিকতা, নিষ্ঠুরতা। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। 

মহামারির এই সময়ে আমরা যদি সচেতন না হই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি তাহলে উপরোক্ত সকল সমস্যা পুনরায় আবার হানা দিতে পারে আমাদের দেশে। সুতরাং কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে চলতে হবে সকলকে। নিয়মিত মাস্ক পরিধান করতে হবে, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭