ইনসাইড টক

‘ফরিদ ‍উদ্দিন হয়তো দায় কাঁধে নিয়ে চলে আসতে চাচ্ছেন না’


প্রকাশ: 26/01/2022


Thumbnail

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ে শিক্ষার্থীদের সাত দিন ধরে চলমান অনশন ভাঙ্গার প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, প্রথমত এটি একটি চরম স্বস্তির খবর। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের জীবন-মরণ এবং উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ, এ দুইটি বিষয়কে সমান করে দেখেছিল। অর্থাৎ তাদের জীবনের মূল্য হচ্ছে প্রফেসর ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের সমান। এর থেকে যে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসতে পেরেছে, আমি মনে করি এটি একটি সফলতা। যারা যারা এ সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখেছে বিশেষ করে ড. জাফর ইকবাল স্যারকে আমি ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে তিনি সস্ত্রীক সিলেটে গিয়েছেন। তাদেরকে বুঝিয়েছেন। এ জন্য ওনার প্রতি আমাদের সকলের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। 

ড. জাফর ইকবাল স্যারের অনুরোধে শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান অনশন ভাঙ্গা, শিক্ষর্থীদের আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক অলিউল ইসলাম।

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, জাফর ইকবাল স্যার তো আর সরকারের সাথে যোগাযোগ না করে সিলেটে যান নাই। অবশ্যই তিনি সরকারের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে সেখানে গিয়েছেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর সাথে জাফর ইকবাল স্যারের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সাথেও স্যারের যোগাযোগ আছে। ফলে সরকারের তরফ থেকে ইশারা পেয়েই তিনি এটা করেছেন। 

তিনি বলেন, এখন যেসব সমস্যা আছে, তা সমাধান করতে হবে। এখন যেহেতু অনশন ভেঙ্গে গেছে, আমি মনে করি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিনের দিক থেকে একটা কাজ করা দরকার। সেটি হলো একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত বা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে পুরো ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী, তা চিহ্নিত করা। উনি যদি বলেন আমি দায়ী হলেও চলে যাবো, নির্দোষ হলেও থাকবো না, কিন্তু একটি তদন্ত করা দরকার, তাহলে পরে ভবিষ্যতে এটি নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকবে না। 

ভিসি ফরিদ ‍উদ্দিনের পদত্যাগ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ভিসি ফরিদ উদ্দিন সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, একটা পর্যায়ে হয়তো উনি নিজেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে চাইবেন না। উনি হয়তো বদনাম বা দায় কাঁধে নিয়ে চলে আসতে চাইছেন না। সেই জন্যই হয়তো এখন পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেননি। কেননা উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন তিনবার ডীন ছিলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন, ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এমনকি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টিও উনার তদারকিতে হয়েছিল। আমি যখন জগন্নাথ থেকে চলে আসলাম, তখন তিনি একা পুরো জিনিসটিকে গুছিয়ে এনেছেন এবং করেছেন। তিনি দক্ষতার সাথে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে সমন্বয় করে বলতে গেলে এক হাতে পুরো ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। গুচ্ছ পরীক্ষার সব কৃতিত্ব উনার। প্রশ্নের গোপনীয়তা মেইন্টিন করা, পরীক্ষার গুণগত মান মেনন্টেইন করা, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দেওয়া, এই বিষয়গুলোতে তার অসাধারণ দক্ষতা আছে। 

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের করা সংবাদ সম্মেলনটি দেখেছি। ছাত্রদের অভিযোগ টংঘর উঠিয়ে দিয়েছে। আবার আমি শুনেছি টংঘরে বিভিন্ন সময় মাদক পাওয়া গেছে, এটা,সেটা অনেক কিছু। তারপর ভিসি নাকি আল্পনা আঁকতে দেয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করে আল্পনা আঁকতে হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ। কেউ কিন্তু বলতে পারেনি যে, তিনি স্বজনপ্রীতি করেছেন, নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন কিংবা প্রকল্পর টাকা মেরে খেয়েছেন, যেগুলো আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি। এমনকি যারা আন্দোলন করছেন, তারাও এ ধরণের কথা বলেনি। ফলে তার যোগ্যতা ও কমিটমেন্ট নিয়ে আমি দ্বিধান্বিত নই। 

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, শাহজালালে ঘটনা যেটি হয়েছে, তা একটি হল কেন্দ্রিক। একটি হলের সমস্যা সমাধানে প্রভোস্ট অপারগতা প্রকাশ করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো ‍গ্রুপ থাকে। শিক্ষক থাকে, শিক্ষক সমিতি থাকে, শিক্ষার্থী থাকে। এগুলোকে ম্যানেজ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছাত্ররা এক দুই দিন সময় দিলে হয়তো এটি ম্যানেজ হয়েও যেতো। কিন্তু এর ভেতরে ক্যাম্পাসে পুলিশের প্রবেশ ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করাতে বিষয়টি উল্টো দিকে ঘুরে যায়। তবে এখানে বলা উচিত  যে পুলিশের হামলার আগে ও পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত করেছে। শিক্ষকদের দৌড়ানি দেয়া হয়েছে। রুমে তালাবন্দি করা হয়েছে। ইট মারা হয়েছে। এখন এগুলো কোনটা আগে হয়েছে আর কোনটা পরে হয়েছে তা জানতে তদন্ত হওয়া দরকার। পুলিশ আগে আক্রমণ করলো নাকি শিক্ষার্থীরা আগে আক্রমণ করেছে, এগুলো নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু সেখানে তো সিসিটিভি আছে। ফলে আমি চাই একটি তদন্ত হোক। 

তিনি বলেন,  ফরিদ ‍উদ্দিনের দোষ হিসেবে আন্দোলনকারীরা যা বলছে, তা হলো ক্যাম্পাসে পুলিশ আক্রমণ করেছে। এখন পুলিশ যে আক্রমণ করলো, তা কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে আক্রমণ করলো, তা কিন্তু আমরা জানি না। পুলিশের আক্রমণে ফরিদ উদ্দিনের কি ভূমিকা ছিল? ফরিদ ‍উদ্দিনকে তো তার রুমে আটকিয়ে তালা মেরে রাখা হয়েছিল। এখন ফরিদ উদ্দিনিই কি পুলিশ ডেকে নিয়ে এসেছে এবং আক্রমণ করতে নির্দেশ দিয়েছে? আমার তো মনে হয় না। পরবর্তীতে আন্দোলনের সাথে তো দেখলাম ভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী জড়িয়ে গেছে।  

জাফর ইকবাল স্যারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে সিরিয়াস পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা নিজেদের জীবনের সাথে ভিসির পদত্যাগকে সমান করে জীবন ঝুঁকি নিয়ে নিয়েছিল। একজন ভিসির পদত্যাগের সাথে যদি শিক্ষার্থীরা নিজের জীবনের মূল্য সমান করে ফেলে, তখন বিষয়টি মারাত্মক বলেই ধরে নেওয়া যায়। এখন পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হচ্ছে। বাদবাকি যে বিষয়গুলোতে ঘাটতি আছে, তা আশু সমাধান করে ফেলা। আর ভিসি ফরিদ উদ্দিনের উচিত একটা নিরপেক্ষ তদন্ত করা। আর ভিসি ফরিদ উদ্দিন শাবিপ্রবিতে আর থাকবে বলে মনে হয় না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭