ইনসাইড পলিটিক্স

সঙ্কটে আমলাদের চেয়ে রাজনীতিবিদরাই ত্রাতা


প্রকাশ: 26/01/2022


Thumbnail

একটি গণতান্ত্রিক সরকারে রাজনীতিবিদরাই চালকের আসনে থাকবেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন সংকট সমাধানে রাজনীতিবিদদের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করেন আমলাদের উপর। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সংকট সমাধানে রাজনীতিবিদরাই বেশি পারদর্শী এবং বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন আমলাদের চেয়ে। বাংলাদেশে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমলাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দুটিই বেড়েছে। করোনা সংক্রমনের শুরুর পর থেকেই সরকারে আমলাদের উপর নির্ভরতা বাড়ে। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ে সংকট সমাধানের জন্য আমলাদেরকেই রাজনীতিবিদদের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া শুরু হয়। আমলারা চালকের আসনে বসেন আর রাজনীতিবিদরা সাইডলাইনে চলে যান। এ নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনেক ক্ষোভ, বিক্ষোভ,অভিমান ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই দেখা যাচ্ছে যে, আমলাদের চেয়ে রাজনীতিবিদরাই সংকট সমাধানে অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং তারাই সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি তার সর্বশেষ উদাহরণ। এই ঘটনায় দেখা যায় যে, প্রশাসনিক উদ্যোগের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্যোগ সফল হয়েছে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে গিয়েছিল এবং সাত দিন ধরেই অনশন চলে। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে  সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। অনেকে মনে করেছিলো যে এরকম পরিস্থিতি চললে শেষ পর্যন্ত একটা বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন। প্রশাসনিক উদ্যোগটি দৃশ্যমান রেখেছিলেন রাজনৈতিক উদ্যোগ চলেছিল আড়ালে। একদিকে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব সহ সরকারের পক্ষ থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য ক্রিয়াশীল শক্তির সঙ্গে কথা বলা হচ্ছিল। আবার অন্যদিক থেকে এটির একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল যে, প্রশাসনিক উদ্যোগ সফল হয়নি, সফল হয়েছে রাজনৈতিক উদ্যোগ। 

আজ সকালে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন ভঙ্গ করেন তবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এটি সরকারের একটি বিরাট শঙ্কট থেকে মুক্তি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ এটি অনেকদূর গড়াতে পারতো। আর এখান থেকে আরেকবার প্রমাণিত হলো যে কোন সংকটের রাজনীতিবিদরাই আসলে সামনের ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং রাজনীতিবিদরাই সংকট সমাধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং সামনের দিনগুলোতে সরকারের সামনে যে ইস্যুগুলো আসবে সেই ইস্যুগুলো সমাধানের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব থাকা প্রয়োজন বলেই অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে আগামীকাল জাতীয় সংসদে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিল পাশ হবে এটির পরে একটি রাজনৈতিক সংকট সরকারের উপর সৃষ্টি হতে পারে। সরকারের উপর বিভিন্ন মহল চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই সংকট সমাধানেও কোনো প্রশাসনিক বা আমলাতান্ত্রিক সমাধান হবে না বলেই মনে করছেন বিভিন্ন মহল। রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন যে,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা,  ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে র‍্যাব নিষিদ্ধ করার দাবি সহ বিভিন্ন যে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে সেই চাপগুলো মোকাবেলার জন্য এখন রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন। কারণ আমলারা যে কোন সমস্যাকে আপাত ধামাচাপা দেয়, সমস্যাকে আড়াল করতে পারে কিন্তু সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী বা চূড়ান্ত সমাধান করতে পারে না। এর জন্যই নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭