ইনসাইড বাংলাদেশ

একজন জাফর ইকবাল স্যার


প্রকাশ: 26/01/2022


Thumbnail

একজন শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক কি হওয়া উচিত, তা হাতেনাতে দেখালেন অধ্যাপক মোঃ জাফর ইকবাল। অধ্যাপক মোঃ জাফর ইকবাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন বেশ কিছু দিন আগে। এখন তিনি একরকম অবসর জীবন যাপনই করছেন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যে তার আত্মার সম্পর্ক, তার হৃদয়ের সম্পর্ক, তিনি তা আরেকবার প্রমাণ করলেন। ড. জাফর ইকবাল একজন মেধাবী এবং একজন উদ্ভাবনী চিন্তার মানুষ। তিনি চাইলেই বিদেশে অনেক দামী দামী, অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানে অনেক বেশি বেতনে চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং মানুষ গড়ার কারিগর এই মানুষটি অর্থলোভে বিদেশে বিত্তশালী হওয়ার মোহে সেখানে অবস্থান করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। দেশে এসেও মোঃ জাফর ইকবালের সামনে অনেকগুলো পথ খোলা ছিল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারতেন। তিনি যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বেতনে চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু এসব না করে, তিনি চলে গেলেন হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তখন কেবল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একেবারেই নতুন আনকোড়া। সেই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তিনি যেন সন্তানের মতো লালন করলেন। আজকে যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেজ, সেই ইমেজের পেছনে অনেকখানি অবদান আছে এই অসামান্য মানুষটির। তিনি শিক্ষক হিসেবে নয়, ছাত্রদের একজন অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। আর এ কারণেই তিনি সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্বাস করতো এবং তার উপর আস্থা রাখতো। 

প্রশ্ন হলো, মোঃ জাফর ইকবালের কি অভিনবত্ব আছে? কেন তিনি শিক্ষার্থীদের এত আপন করে নিতে পেরেছিলেন? এর উত্তর খুব সহজ। মোঃ জাফর ইকবাল শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে দেখেছেন। শিক্ষার্থীদের তিনি অভিভাবক হিসেবে দেখেছেন। তিনি এবং তার স্ত্রী দুইজন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে শিক্ষকদের ভূমিকা কি হওয়া উচিত, সেটি বারবার দেখিয়েছেন। একারণেই শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্বাস করে এবং তাকে অভিভাবক হিসেবে মনে করে। আসলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক এটাই হওয়া উচিত। জাফর ইকবাল অবশ্যই একটি রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনাকে ধারণ করেন, লালন করেন এবং তিনি তার বিশ্বাস প্রকাশে কোনো রকম কার্পণ্য করেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের বিপক্ষে, তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। এজন্য তার জীবনের উপর হুমকিও এসেছে। তাকে বিভিন্ন সময় হত্যার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও তিনি তার আদর্শ থেকে দূরে থাকেননি। 

একদিকে তিনি যেমন আদর্শে অটল ছিলেন, অন্যদিকে শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে কেবল একজন শিক্ষক। তিনি শিক্ষকদের দলাদলি, কোন্দল ইত্যাদিতে কখনোই মনোযোগী হননি। সবসময় তিনি চেয়েছেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি পবিত্রভূমি, এখানে শিক্ষকদের একমাত্র কাজ হলো তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষিত করে তোলা। এই কাজটি নিষ্ঠার সাথে পালন করলেই যে একজন শিক্ষক শ্রদ্ধার পাত্র হন, একজন শিক্ষকের কথায় শিক্ষার্থীরা সবকিছু করতে পারেন, তার প্রমাণ হলো আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন বা অন্যান্য রাজনৈতিকপ্রবণ লেজুড় শিক্ষকরা কি মোঃ জাফর ইকবালের কাছ থেকে কিছু শিখবেন? যারা দলকানা হয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেন, যারা দলকানা হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে অমানবিক আচরণ করেন, যারা চাটুকারিতা করে শিক্ষার মান মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করেন, তাদের জন্য ড. জাফর ইকবাল একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। জাফর ইকবাল যে নতুন কিছু করছেন এটি না, যেকোনো শিক্ষকেরই এই কাজটি করা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আমাদের শিক্ষকেরা অধিকাংশই এই কাজের সাথে যুক্ত না। সেই কারণেই শিক্ষার্থীরা তাদের পদত্যাগ দাবি করে, তাদের কুশপুত্তলিকা জ্বালায়। যদি সত্যিকারের শিক্ষকের মতো কেউ শিক্ষক হন, তবে তিনি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা পাবেনই। একজন জাফর ইকবাল সেটি আবার প্রমাণ করলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭