ইনসাইড বাংলাদেশ

আজ সংসদে পাস হতে যাচ্ছে ইসি গঠন বিল


প্রকাশ: 27/01/2022


Thumbnail

নানা আলোচনা-সমালোচনা মাঝেও আজ সংসদে পাস হতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি উত্থাপন করবেন।  প্রক্রিয়া শেষে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হবে। সব মিলিয়ে ১০ দিনের মধ্যে বিলটি পাসের প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সংসদ সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে আজকের কার্যসূচি থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সংসদের আজকের কার্যসূচিতে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের নিমিত্তে বিধান প্রণয়নকল্পে আনিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল, ২০২২’ পাসের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।  

গতকাল বুধবার (২৬ জানুয়ারি) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে বিলটির দুটি ধারায় আংশিক পরিবর্তনের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেয়। সংসদের বৈঠকে সুপারিশসহ বিলটির ওপর সংশোধিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার।

এর আগে ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত খসড়া আইনটি নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর গত রোববার সংসদের বৈঠকে তা বিল আকারে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। উত্থাপনের পর আপত্তি জানান বিরোধী দল বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা। 
 
গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়েও এই বিলের সমালোচনা করেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দুই সদস্য ফখরুল ইমাম ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া সংসদের বাইরেও এ বিলের বিভিন্ন ত্রুটি ও অপূর্ণতা নিয়ে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন মহল জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠন করবেন- এমন নির্দেশনা থাকার পরও দীর্ঘ ৫০ বছরে কোনো সরকারই এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি। দেশে ইসি গঠনে প্রথমবারের মতো একটি নতুন আইন হতে যাচ্ছে।

এর আগে রোববার ৭ দিনের সময় দিয়ে বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটি দুই ঘণ্টার এক বৈঠকে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিলটি পাসের জন্য সংসদের বৈঠকে উত্থাপন করতে যাচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের খসড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা-অযোগ্যতার অংশে দুটি পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও কমিশনার হতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি 'স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়' শব্দ দুটি যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

অর্থাৎ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে সার্চ কমিটি এমন কাউকে সুপারিশ করবে, যার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না।

এই ধারায় 'দুই বছরের কারাদণ্ড ' শব্দের পরিবর্তে শুধু কারাদণ্ডের সুপারিশ করেছে কমিটি। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই তিনি সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

আগের সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের বৈধতা প্রদান

আজ পাস হতে যাওয়া বিলটিতে এর আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা সর্বশেষ দুটি ইসি গঠনেরও বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে| এতে বলা হয়েছে, এর আগে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটি, তাদের কাজ এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং এ বিষয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না|

সার্চ কমিটি গঠন ও এর কর্মপ্রক্রিয়া

বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। সিইসি ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে দুই জন করে মোট ১০ জনের নাম প্রস্তাব করার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। বিলটিতে বলা হয়, সার্চ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। আর কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।

এদিকে গতকাল সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন এনেছে। কিন্তু আইনটি অসম্পূর্ণ এবং এটা সংশোধন করতে হবে। না হলে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, একটা আইন নিয়ে এসেছেন। এটা জনগণের দাবি ছিল। এ জন্য ধন্যবাদ। তবে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এই দুটি কাজ রাষ্ট্রপতি করতে পারেন। অন্য সব দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন। একটি নতুন আইন করা হচ্ছে, এখানে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানে ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দিতে পারেন কি না, তা আমি জানি না। এটা দেখতে হবে। অন্ততপক্ষে এখানে আইনের প্রাধান্য দেওয়া উচিত।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭