ইনসাইড বাংলাদেশ

শিক্ষামন্ত্রী বনাম জেলা প্রশাসক: কে সত্যি?


প্রকাশ: 27/01/2022


Thumbnail

প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিতর্ক নতুন রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিগ্রহণ নিয়ে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের অবস্থান এখন মুখোমুখি। এ নিয়ে আজ একটি জাতীয় দৈনিকে খবরও বেরিয়েছে যার শিরোনাম মন্ত্রী ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতির জাল। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ সম্প্রতি একটি অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে কিছু ব্যক্তি পরস্পরের যোগসাজশে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জমি ক্রয় করে এবং অস্বাভাবিক মূল্য দেখানো হয়। আর এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিলেন এবং এই কমিটি নির্ধারিত মৌজায় জমি বেচাকেনার দলিল পর্যালোচনা করে ১৩৯টি দলিল পায় অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে। এটিতে ২০ গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। আর এসব দলিল হয়েছে ২০২০ সালের ১৮ মে থেকে ২০২১ সালের ১৫ মে'র মধ্যে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরুর পর ওই সমস্ত জমি কেনাবেচা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আর এই অভিযোগের তীর ছোড়া হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর দিকে। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, শিক্ষামন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরাই এ সমস্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় করেছে।

অভিযোগ উঠেছে যে, জমি ক্রয়-বিক্রয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫.৬৮ একর জমি দলিল করেছেন। তার মামাতো ভাই এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামের নামে ১৬১ শতাংশ জমি ক্রয় করা হয়েছে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর নামেও কেনা হয়েছে ৯৩ শতাংশ জমি। আর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত এই জমি ক্রয়ের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা বলেছে যে, ওই এলাকায় প্রকৃত মৌজার দর ধরে জমির অধিগ্রহণের দাম নির্ধারণ করলে ৬২ একরের দাম হয় ১৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু হঠাৎ উচ্চমূল্য দেখিয়ে এসব দলিল করা হয়েছে, যেটা আমলে নিলে সরকারকে ৫৫৩ কোটি টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে ৩৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য। বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠান গত ১৬ নভেম্বর। তাতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছর ৬ এপ্রিল চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সদর উপজেলার ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর মৌজার ৬২.৫৪৯০ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল জমির দাগসূচি চূড়ান্ত করে অধিগ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব পায় জেলা প্রশাসন। কোন জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেটা নির্বাচন করছে প্রত্যাশী সংস্থা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, মৌজায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নির্ধারিত বাজারমূল্য অনুযায়ী নামশ্রেণী প্রতি শতাংশ জমির দাম ১৩ হাজার ৮০২ টাকা। বিভিন্ন শ্রেণীর ভূমির জন্য সাব-রেজিস্ট্রি সংরক্ষিত সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্ধারিত মৌজার দরের তুলনায় অধিগ্রহণের জন্য সংগ্রহ মূল্যহার চরম অস্বাভাবিক বেশি, যা ২০.৪ গুণ দেখা যায়। এটা বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর। এটাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অবস্থায় চরম অস্বাভাবিক দলিলগুলো বিবেচনায় নিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন তৈরি করলে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা ক্ষতি হত। একই সঙ্গে মানুষ ভূমি হস্তান্তরসহ এই সংক্রান্ত নানা অসুবিধার মধ্যে সম্মুখীন হতো। তাই অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের সম্পদের দলিল ছাড়া ওই মৌজায় অন্যান্য সাব-কাবলা বিবেচনায় নিয়ে ওই জমি অধিগ্রহণের প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের এই প্রতিবেদনকে শিক্ষামন্ত্রী অস্বীকার করেছেন এবং শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে, এই ভূমিগ্রহণ বা অধিগ্রহণের সঙ্গে তিনি বা তার পরিবারের কেউ জড়িত নয়। আমরা আসুন নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করে দেখি আসলে কে সত্যি।

যেকোনো জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জমির মূল্য নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক বা ডিসট্রিক্ট কালেক্টর। এখানে জমির মালিকের জমির মূল্য নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে অস্বাভাবিক মূল্য ধরলো কে, এই প্রশ্নটি আসে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, আইন অনুযায়ী স্থাবর সম্পত্তি, ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন-২০০৭ এর ৯ (১) অনুযায়ী প্রাক্কলন প্রস্তুত করতে হবে। আইন অনুযায়ী, চার ধারার নোটিশ জারির পূর্ববর্তী ১২ মাসের গড় মূল্য নির্ধারিত নিয়মে হিসাব করা হয়। তাহলে প্রশ্ন উঠলো যে, ভূমির মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যদি ভূমির মালিকদের কোনো ভূমিকা না থাকে, তাহলে ভূমির মূল্য যদি কৃত্রিমভাবে কেউ বাড়ায় তাহলে জেলা প্রশাসন কেন সেটি করলো না। আর এ থেকেই একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, একটি অশুভ চক্র নির্বাচনের আগে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নানারকম মিথ্যাচার এবং পরিকল্পিত অপপ্রচারের ভূমিকা নিচ্ছে, সেখানে প্রশাসনের ভূমিকাটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই বিষয়টি স্পর্শকাতর একটি বিষয় এবং যেটিকে এখন একটি রাজনৈতিক আবরণ দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কাজেই এই বিষয়টি নিয়ে দ্রুত তদন্ত হওয়া দরকার বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭