ইনসাইড বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক চাপ: ভুল পথে সরকার?


প্রকাশ: 27/01/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ওপর একাধিক চাপ প্রয়োগ করেছে। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল জাতীয় সংসদে বলেছেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তারা কাজ করছেন, এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। অর্থাৎ আপাতত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছেনা। পাশাপাশি জো বাইডেন দুর্নীতিবিরোধী নীতির আলোকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরো কিছু ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‍্যাবকে যেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ না দেওয়া হয়, সেজন্য জাতিসংঘে একটি আবেদন করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ১২টি মানবাধিকার সংগঠন। এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশ র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছেন একজন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্টারিয়ান। যদিও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে আজ বলা হয়েছে, এটি একজন ব্যক্তির মতামত, এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতামত নয়। কিন্তু এ সমস্ত ঘটনা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বলাবহুল্য, এই চাপ যে সৃষ্টি করছে বিএনপি-জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী, তা বলার অপেক্ষাই রাখেনা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন, যে প্রতিষ্ঠানগুলো বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট হিসেবে কাজ করছে এবং তারা বাংলাদেশের এই চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলেও বিভিন্ন মহল মনে করে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিরা লাগাতারভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে সেটি মূলধারার গণমাধ্যমে আনছে এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন সেটিকে লুফে নিচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চাপ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের যে কাজগুলো করা উচিৎ সেই কাজ করছেনা। বরং বাংলাদেশ এই সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করার যে কৌশল গ্রহণ করেছে সে কৌশলটি ভ্রান্ত বলেই অনেকে মনে করছে। বিষয়টা এরকম যে, উট পাখির মুখ গুঁজে থাকার মতো অবস্থা। কিন্তু উটপাখি মুখ গুঁজে থাকলে যেমন ঝড় বন্ধ হয়না, তেমনি বাংলাদেশ যদি সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে তাহলে সংকটের সমাধান হবেনা। এজন্যই কূটনৈতিক মহল মনে করছে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।

প্রথমত, তারা মনে করছেন যে, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে মিশনগুলো রয়েছে সেই মিশনগুলোতে যোগ্য লোকদেরকে প্রতিস্থাপন করা উচিৎ। বিশেষ করে, স্পর্শকাতর দেশগুলোতে যথাযথ এবং রাজনৈতিকমনস্ক ব্যক্তিদের জরুরী ভিত্তিতে পদায়ন করা দরকার।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচারণা বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন যে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঠিক অবস্থাটা তুলে ধরা দরকার, যেটি ২০১৩-১৪ সালেও করা হতো। সেই ধারাটাই ফিরিয়ে আনা দরকার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থানটা সুস্পষ্ট করা দরকার।

তৃতীয়ত, তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত দেওয়া উচিৎ, যে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

চতুর্থত, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে কাজে লাগানো। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন, ফিচার, অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করা জরুরী বলে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছে।

সর্বশেষ, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করা। মানবাধিকার কমিশন, তথ্য অধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় এবং গতিশীল করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের একটা চেষ্টা করতে পারে। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, খুব দ্রুত এই কাজগুলো করা দরকার, না হলে সরকারের ভাবমূর্তি আরও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭