কালার ইনসাইড

শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কার পাল্লা ভারী?


প্রকাশ: 27/01/2022


Thumbnail

আগামী ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এবার নির্বাচনে লড়ছেন দুইটি প্যানেল। একটি ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল ও অন্যটি মিশা-জায়েদ প্যানেল। এ নির্বাচন ঘিরে ঘিরে উত্তাল হাওয়া বইছে চলচ্চিত্রপাড়ায়। এক প্যানেল অন্য প্যানেলকে প্রশ্ন বানে জর্জরিত করে রেখেছে। 

প্যানেল বদল করেছেন যারা

২০১৭-১৯ এবং ২০১৯-২১। এই দুই মেয়াদে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ক্ষমতা সামলেছেন মিশা সওদাগর (সভাপতি) ও জায়েদ খানরা (সাধারণ সম্পাদক)। প্রথম নির্বাচনে তাদের সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়িকা নূতন, পপি, পূর্ণিমা, রোজিনা, অঞ্জনা, নায়ক রিয়াজ, মামনুন ইমন, বাপ্পারাজ, নিরব হোসেন, সাইমন সাদিক, আলীরাজ এবং খল অভিনেতা ডন ও নানা শাহর মতো তারকারা। সেবার ওমর সানি (সভাপতি প্রার্থী) ও অমিত হাসান (সাধারণ সম্পাদক) প্যানেলকে তারা বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিল্পী সমিতিতে বসেছিলেন।

এরপর গত নির্বাচনে মিশা-জায়েদরা বলতে গেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সমিতির ক্ষমতায় আসেন। কারণ, ওই নির্বাচনে তাদের বিপক্ষে ছিল না কোনো প্যানেল। একমাত্র প্রতিপক্ষ ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তিনি স্বতন্ত্র থেকে সভাপতি পদে লড়েছিলেন। কিন্তু টিকতে পারেননি। যদিও গতবারের নির্বাচনে মিশা-জায়েদদের সঙ্গে ছিলেন না ২০১৭-১৯ নির্বাচনের রিয়াজ, পপি ও পূর্ণিমার মতো তারকারা। তাতে ক্ষমতায় বসতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। কারণ রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমাদের শূন্যস্থান পূরণ করেছিলেন রুবেল ও ডিপজল।

কিন্তু এবারের চিত্রটা বোধহয় একটু হলেও ভিন্ন। কারণ, এবার মিশা-জায়েদদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন একটি শক্তিশালী প্যানেল। যেটির সভাপতি পদে রয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো নন্দিত অভিনেতা। সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়িয়েছেন নিপুণ আক্তারের মতো জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা। এছাড়া আছেন রিয়াজ, ফেরদৌস, ডিএ তায়েব, শাহনূর, নিরব হোসেন, মামনুন ইমন, সাইমন সাদিক, অমিত হাসান, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, জেসমিন, কেয়া, পরীমনি ও গাঙ্গুয়ার মতো অভিনয়শিল্পীরা। এদের মধ্যে নিরব, ইমন, সাইমন, নান শাহ, আফজাল শরীফ, কেয়া ও জেসমিনরা গতবার মিশা-জায়েদদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এবার তারা ভিড়েছেন কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে। পাশাপাশি এবার মিশা-জায়েদদের বিরুদ্ধে শিল্পীদের রয়েছে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। 

১৮৪ জন শিল্পীর সদস্যপদ বাতিল 

এই কমিটি গত দুই মেয়াদে ১৮৪ জন শিল্পীর পূর্ণ সদস্যপদ কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই সব শিল্পীদের করে রেখেছেন সহযোগী সদস্য। যার ফলে তারা এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন না। সে সব শিল্পীরা রীতিমতো ক্ষীপ্ত মিশা-জায়েদদের প্রতি।

পূর্ণ সদস্যপদ হারানো শিল্পীরা গত দুই বছর দফায় দফায় আন্দোলন করেন এফডিসির ভেতরে এবং বাইরে। করেন মানববন্ধনও। সেখানে মিশা-জায়েদদের পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। এছাড়া সে সময় তাদেরকে নিষিদ্ধ করার হুমকিও দিয়েছিল চলচ্চিত্রের কয়েকটি সংগঠন। সম্প্রতি আবার সদস্যপদ হারানো শিল্পীরা হাইকোর্টে আবেদন করেন এবারের নির্বাচন স্থগিত করার জন্য। যদিও হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া শিল্পীদের রুল প্রস্তুত হলে তা শুনবেন বলেও জানান আদালত।

পপির প্রকাশ্যে আসা 

দেড় বছর পর আড়াল ভেঙে বুধবার প্রকাশ্যে এসেছেন আলোচিত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। তিনি মিশা-জায়েদ কমিটিকে ইঙ্গিত করে খুবই ভয়ংকর অভিযোগ করেছেন। দাবি করেছেন, তার মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন নায়িকাকেও নাকি সদস্যপদ বাতিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গান নিয়ে বিপত্তি

এদিকে আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণার অংশ হিসেবে দুই প্যানেল বেশ কয়েকটি গান তৈরি করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ প্যানেলের একটি গান বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে নোট দিয়ে ভোট কেনার দিন শেষ। গানের এই লাইনটি নিয়েই ইতোমধ্যে নানা বিপত্তি দেখা দিয়েছে। 

কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, এবারের নির্বাচনে আমি কষ্ট পেয়েছি। ‘নোট দিয়ে ভোট কেনার দিন শেষ’ গান দিয়ে জুনিয়র শিল্পীরা নাচানাচি করেছেন। বিষয়টি আমার কাছে ভালো লাগেনি। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার কথা আসবে কেন? এত বছরের অভিনয় জীবনে এসব দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়, আমরা জোকারে পরিণত হচ্ছি। আমাদের সবার বুঝে শুনে ভোট দেয়া প্রয়োজন।

আনোয়ারা আরও বলেন, মিশা-জায়েদ প্যানেল শিল্পীদের জন্য করোনার সময়ে যথেষ্ট কাজ করেছে। অনেক বড় বড় নায়ক আছেন, কোথায় তারা? খোঁজ তো নেয়নি। শিল্পী সমিতির কমিটিতে যারা ছিলেন তারাই খোঁজ নিয়েছেন। যাই হোক নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবে। দুই প্যানেলের জন্য শুভ কামনা রইলো।

আনোয়ারার পাশাপাশি আরও অনেক সিনিয়র শিল্পী মিশা-জায়েদ প্যানেলকে সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন। পাশাপাশি দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী  অস্ট্রেলিয়া থেকে এই প্যানেলকে সমর্থন জানিয়েছেন।

অভিনেত্রী শিমুর মৃত্যুতে জায়েদ খানকে অভিযুক্ত করা 

অভিনেত্রী শিমুকে পূর্ণ সদস্য থেকে সহযোগী সদস্য করে ছিলেন মিশা-জায়েদ প্যানেল। কিছুদিন আগে এই অভিনেত্রীকে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ পাওয়া যায় কেরানীগঞ্জে বস্তাবন্দী অবস্থায়। শুরুতে তাঁর হত্যার জন্য অনেকেই আঙ্গুল তুলেছিলেন জায়েদ খানের দিকে। কিন্তু একদিনের মাঝেই হত্যাকাণ্ডের জন্য গ্রেফতার করা হয় শিমুর স্বামী নোবেলকে। তিনি নিজেই হত্যার কথা স্বীকার করেন। নির্বাচনের আগে অভিনেত্রী হত্যায় জায়েদ খানের দিকে আঙ্গুল তোলায় অনেকেই তা নিয়ে সমালোচনা করেন। অনেকেই বলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন নোংরামির কোন মানে হয়না। 

ইলিয়স কাঞ্চন যুক্ত হওয়ায়

এদিকে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে আসন্ন নির্বাচনে নিপুন প্যানেলে ইলিয়াস কাঞ্চন যুক্ত হওয়ায় অনেকেই এই দলকে সমর্থন করছেন। পাশাপাশি ইলিয়াস কাঞ্চনকে তারা সভাপতি হিসেবে চাচ্ছেন। শুধু তাই নয় অনেকেই আবার রিয়াজ, ফেরদৌসকে নিয়েও তুলেছেন নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন এত বড় বড় অভিনেতা তাঁরা কিন্তু করোনার এই মহামারিতে শিল্পীদের পাশে কোথাও দেখা যায়নি তাদের। এখন নির্বাচনের এসে নানা ধরণের কথা বলছে কেন? 

এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে সবার মাঝে। শুধু চলচ্চিত্র কর্মীদেরই নয় দেশের গ্রাম পর্যায়েও চলে গেছে এই নির্বাচনের খবর। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমর্থন জানাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চকে। আবার অনেকেই জানাচ্ছেন জায়েদ খানকে। তবে এটা বলাই যেতে পারে এব আরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বেশ। কেননা দুই প্যানেলেই আছে হেবি ওয়েট তারকারা। এখন দেখার অপেক্ষায় কোন প্যানেল কিংবা কার মুখে ফোঁটে শেষ বিজয়ের হাসি। কে আবার আসেন শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে তা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষায়?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭