ইনসাইড এডুকেশন

মানবসম্পদ গঠনে প্রযুক্তিমুখী শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/12/2017


Thumbnail

বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মানব সম্পদের যথার্থ উন্নয়ন প্রয়োজন। সেজন্য প্রযুক্তিমুখী শিক্ষা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, তাঁরা তাঁদের মানব সম্পদ গঠনে প্রযুক্তিমুখী শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েছে। জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদার ভিত্তিতেই মূলত অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। অবশ্য সক্ষমতা থাকলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতেও প্রতিনিধিত্ব করা যায়। যেসব দেশ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে যত বেশি অংশগ্রহণ দেখিয়েছে, তাদের জাতীয় অর্থনীতি তত বেশি শক্তিশালী হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যার আধিক্য বিশ্বের অন্য যে কোন বড় দেশের তুলনায় বেশি। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের এ যুগে সারা পৃথিবী যখন দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে বিশ্ব অর্থবাজারকে করায়ত্ত করার কাজে ব্যস্ত, তখন আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ কিছু রাষ্ট্রে অদক্ষ জনশক্তি প্রেরণের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছি। তাও অনেক রাষ্ট্রে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে এখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠছে, আমরা আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কতটুকু পারদর্শী ?

প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে যখন বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে কয়েক লাখ বিদেশি প্রফেশনাল উচ্চ বেতনে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ভারত ও শ্রীলংকা এগিয়ে। তবে আমাদের দেশ দক্ষ জনশক্তি গঠনে এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে। এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। মূল কারণ হলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আজও প্রযুক্তিমুখী হয়ে ওঠেনি। ফলে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন এসে যায়। ২০১৫ সালের ইউজিসির হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৩৮টি পাবলিক আর ৮২টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ থেকে ৫টি ছাড়া বাকিগুলোর শিক্ষার মান ও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ৮২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বাদে অধিকাংশের মধ্যে ১০টির বেশি শিক্ষা বিভাগ নেই।

যেগুলো আছে তাতে গবেষণা বা শিক্ষার মান নির্ণয়ের কোন মাপকাঠিই নেই। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় বেড়েছে সত্য, কিন্তু শিক্ষার মান সে পর্যায়ে আসলেই কি বেড়েছে? বাড়েনি। এ কারণেই আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ভারতের কথা বাদই দিলাম, শ্রীলংকা বা আশপাশের আরও ছোট ছোট দেশের চেয়েও পিছিয়ে আছি। এখনও বুয়েট ছাড়া অন্যান্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম পুরোটাই সনাতনি। প্রথাগত শিক্ষককেন্দ্রিক লেকচারে ছাত্রদের তেমন আকৃষ্ট করা যায় না। বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক সংযুক্তি (পার্টিসিপেটরি) ও ডিজিটালাইজেশনের কথা বারবার উচ্চারিত হলেও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে এর তেমন প্রভাব পড়ছে বলে মনে হয় না। তাই, ইউজিসির কঠোর নিয়মের মধ্যে যদি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা না হয় আর গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা না হয়, তাহলে দক্ষ জনশক্তি তৈরির সক্ষমতা অর্জন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। সমাজ ও যুগের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা বিভাগ খোলার একটি সামাজিক চাপ বা চাহিদা আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকেও আসা উচিত।

মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এমনকি ভারতের কথাও যদি আমরা বলি, তাহলে দেখা যাবে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের অবদান অপরিসীম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের চাহিদার আলোকে দেশি-বিদেশি গবেষকদের স্কলারশিপ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গেছে। তাঁরা নিজেদের প্রয়োজনের চাহিদা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী ফান্ড সরবরাহ করেছেন। এসব স্কলার উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের চাহিদামাফিক গবেষণাও সম্পন্ন করেছেন। এ সমন্বয় থেকে দেশ ও জাতি তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি পেয়েছে এবং অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সারাবিশ্বজুড়ে চলছে আজ প্রযুক্তিমুখী শিক্ষার দাপট। প্রযুক্তিমুখী শিক্ষা থেকে আমরা বঞ্চিত হতে চাই না। প্রযুক্তিমুখী শিক্ষার দিকে আমাদের ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাই আমাদের দেশের মেইন স্ট্রিমের শিক্ষায় প্রযুক্তিমুখী শিক্ষাকে যুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের কোন বিকল্প নেই। এ প্রক্রিয়ায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা গেলে আমাদের দেশের দক্ষ জনশক্তি বিদেশের মাটিতে কাজের মাধ্যমে সুনাম কুঁড়াবে আর দেশ অর্জন করবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।


বাংলা ইনসাইডার/টিবি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭