ইনসাইড পলিটিক্স

দীপু মনি কেন টার্গেট হলেন?


প্রকাশ: 28/01/2022


Thumbnail

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে এখন সারা দেশে তোলপাড় চলছে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ভূমি অধিদপ্তরে এক অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগে তিনি বলেছেন যে, ৬২.৫ একর জমি মৌজা দরের ২০ গুণ ধরে দলিল করা হয়েছে। প্রকৃত মৌজা দরে জমি অধিগ্রহণ করলে তার ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি টাকা। উচ্চমূল্য দেখানোয় দর দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ থেকে আমার পরিবারের সদস্যদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোন সুযোগ নাই। জমি অধিগ্রহণে পরিবারকে জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগ অসত্য, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ নিয়ে এখন রাজনীতি অঙ্গনে এখন নানামুখী আলোচনা চলছে।

প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে কেন দীপু মনিকে টার্গেট করা হয়েছে। এই প্রশ্ন উঠেছে এই কারণে যে, এখন পর্যন্ত চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে সেই প্রতিবেদনেই অসঙ্গতি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু বিষয় পাওয়া গিয়েছে। যেমন-

প্রথমত, ভূমির মূল্য নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। কাজেই ভূমির মূল্য কমবেশি ইত্যাদি নির্ধারণ করবে জেলা প্রশাসক। যেমন- ঢাকার গুলশানের কথাই ধরা যাক। সেখানে প্রকৃত ভূমির দাম আর সরকার নির্ধারিত ভূমির দামের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। এখন সরকার কি যে দামে জমি কেনাবেচা হয় সেই দামে জমি কিনবে নাকি সরকার নির্ধারিত যে মূল্য রয়েছে গুলশানের জন্য সেই দামে কিনবে? কাজেই, প্রথম যে অভিযোগটি করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সেটির মধ্যে এক ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কাউকে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

দ্বিতীয়ত, বলা হয়েছে যে ৬২.৫ একর মৌজা দরের ২০ গুণ দামে দলিল করা হয়। আবার দেখানো হয়েছে যে, প্রকৃত মৌজার দরে অধিগ্রহণের ব্যয় ১৯৪ কোটি টাকা আর উচ্চমূল্য দেখানো হয় এটার ব্যয় হবে ৫৫৩ কোটি টাকার। প্রশ্ন উঠছে যে, ১৯৪ কোটি টাকার ২০ গুণ কি ৫৫৩ কোটি টাকা? তাহলে তো অংকের নতুন হিসেব-নিকেশ করতে হবে। পুরো ঘটনাটার মধ্যে কোথাও নেই যে, দীপু মনি কোথাও জমি কিনেছেন। তার ভাই জমি কিনেছেন বা তার আত্মীয় বা তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা জমি কিনেছেন। তাহলে তার ভাই বা রাজনৈতিক সহকর্মীদের জমি কেনার দায় দীপু মনিকে বহন করতে হবে? একটি বিষয়ে অস্পষ্ট রয়েছে, দেখা গেছে যে দীপু মনির ভাই যে জমি কিনেছেন সে জমিগুলো কেনা হয়েছে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জমি নির্ধারণের বহু আগে। কাজেই, তিনি জেনে শুনে এখানে জমি অধিগ্রহণ করেছে এমনটিও ধোপে টেকে না। তার মানে পুরো বিষয়টিতে একটি নাটক সাজানো হয়েছে, যে নাটকে দীপু মনির ইমেজ নষ্ট করা যায়।

দীপু মনি হলেন আওয়ামী লীগের সেই নেতা যিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ওয়ান-ইলেভেনের সময় মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনার পক্ষে এবং মাইনাস ফর্মুলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে ডা. দীপু মনি একজন। আর সেখানেই তার রাজনৈতিক জীবনের উত্থান ঘটে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন এবং ২০১৪ সালে তিনি কোন মন্ত্রিত্ব পাননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। দীপু মনি একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং মতিয়া চৌধুরীর পরে আওয়ামী লীগে যে সমস্ত নারী নেতারা স্বীকৃত বা ভবিষ্যতে নেতা হিসেবে বেড়ে উঠছেন তাদের মধ্যে দীপু মনি একজন। তাহলে শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এবং রাজনীতিতে তার উত্থানের জন্যই কি কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছেন? কারণ জেলা প্রশাসকের যে রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় তিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান।

চাঁদপুরের আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি দীর্ঘদিনের এবং দীপু মনির নির্বাচনী এলাকায় একটি প্রবল প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাকে লড়াই করতে হয়েছে। আর তারাই কি এই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে একটি নাটক সাজিয়ে দীপু মনির ইমেজ নষ্টের চেষ্টা করলেন? এ প্রশ্নটির উত্তর খতিয়ে দেখা দরকার। তাছাড়া দীপু মনি দুই দফায় প্রায় আট বছর মন্ত্রিত্ব করেছেন, তার বিরুদ্ধে কখনোই বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। তার আত্মীয়স্বজন কি করেছেন না করেছেন তার দায় কেন দীপু মনিকে নিতে হবে? তাই দীপু মনিকে কোনো সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য টার্গেট করা হয়েছে কিনা এটি খতিয়ে দেখা দরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭