ইনসাইড পলিটিক্স

শামীম ওসমানকে কি বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশ: 28/01/2022


Thumbnail

জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের সমাপনী দিনে শামীম ওসমানকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তার জন্য দোয়া করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অল থ্যাংকস টু ইউ। শামীম ওসমান নিজেই এই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর তাৎপর্য অনুধাবনের চেষ্টা করছেন। শামীম ওসমান নিজেই এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, তিনি বলেছেন করোনার কারণে সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ থেকে সাত ফুটের কাছে কেউ যেতে পারে না। বিরতির সময় আমি তার পিছনের সিটে বসা ছিলাম। ওই সময় আমার পাশে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকান। তখন আমাকে দেখে বলেন, অল থ্যাঙ্কস টু ইউ। শুরুতে আমি ভেবেছিলাম, হয়তো এটা আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যেহেতু আজকে আইনটি পাস হচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি বললেন, সমস্ত থ্যাঙ্কস শামীম ওসমানকে।

শামীম ওসমান আরো বলেন, আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর আমি কাছে যাই। তখন আমি তাকে কিছু কষ্টের কথা বলি। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কষ্ট নিও না, আল্লাহ উনাদেরকে বেহেশত নসিব করবেন। শামীম ওসমান আরো বলেন, কথার শেষের দিকে তিনি আমায় কাছে ডেকে নেন, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন, তিনি আমাকে প্রাণভরে দোয়া করেছেন। একজন রাজনৈতিকের কাছে এরচেয়ে বড় পাওনা কি হবে। এরপর শামীম ওসমানের কোণঠাসা হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি আবার পুনরুদ্ধার হলো কিনা তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠ, যারা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ছিলেন তাঁরা মনে করছেন যে, শেখ হাসিনার প্রত্যেকটি স্বত্বা আলাদা আলাদা। তিনি যেমন শামীম ওসমানের পরিবারকে ভালোবাসেন, তাদেরকে আপন মনে করেন, নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন যে, ওসমান পরিবারের সঙ্গে তিনি থাকবেন। ঠিক তেমনিভাবে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের স্বার্থকে তিনি সবার উপরে স্থান দেন। একটির সঙ্গে আরেকটিকে যারা গুলিয়ে ফেলে তারা শেখ হাসিনার রাজনীতি অনুধাবন করতে পারে না।

শেখ হাসিনা ব্যক্তি শামীম ওসমানকে পছন্দ করেন, স্নেহ করেন। এই স্নেহ তার কাছে সবসময় থাকবে। যেমন তিনি সুলতান মনসুর আহমেদকে স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। তিনি দল ত্যাগ করার পরও সেই স্নেহ এখনো তার জন্য রয়েছে। একইভাবে শামীম ওসমান এবং তার পরিবার অতীতে আওয়ামী লীগের জন্য যা করেছে এবং তাদের যে পারিবারিক সম্পর্ক সেটি শেখ হাসিনা কখনো নষ্ট হতে দেবেন না। আবার শামীম ওসমানের কারণে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি বিভক্ত থাকুক বা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটাও শেখ হাসিনা হতে দেবেন না। দুটি আলাদা আলাদা বিষয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের যে ভূমিকা সেই ভূমিকাও প্রশংসনীয় অবশ্যই। কারণ, শামীম ওসমান যদি তার রাজনৈতিক জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে আইভীর বিরুদ্ধে কাজ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অন্যরকম একটা চিত্র দেখা যেত। এখানে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও সেটি হতো এক বিভক্তির আওয়ামী লীগ।

নারায়ণগঞ্জের আগামী নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান হবে এবং এখন যে শামীম ওসমানের পকেট কমিটিগুলো আছে সেই পকেট কমিটিগুলোকে ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগ ভেঙে ফেলা হয়েছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ভাঙ্গা হয়েছে। অন্যান্য কমিটিগুলো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, শেখ হাসিনার এই আশীর্বাদ এর মাধ্যমে শামীম ওসমান হয়তো পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন, হয়তো তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসীন হতে যাচ্ছেন। আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে শামীম ওসমান আসেন তাহলে একদিক দিয়ে যেমন শামীম ওসমান মর্যাদাশীল হবেন, ওসমান পরিবারের প্রতি যে ভালোবাসা সেই ভালবাসার প্রকাশ ঘটবে আর অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিও বিভক্তি মুক্ত হবে। শামীম ওসমানকে আশীর্বাদ শেখ হাসিনা সবসময় করবেন তা তিনি যাই করুন না কেন। আবার রাজনীতির প্রশ্নে দলের স্বার্থকে শেখ হাসিনা সবসময় ঊর্ধ্বে তুলে ধরবেন এবং সেখানে যদি কেউ দলের ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাকেও শেখ হাসিনা একচুলও ছাড় দেবে না, এটাই হলো শেখ হাসিনার রাজনীতি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭